বিদ্যা শিখাইয়া দিতেছি। তুমি বাহিরে আসিবার সময় আমি মরিয়া যাইব, তখন এই বিদ্যার দ্বারা তুমি আমাকে বাঁচাইয়া দিবে।”
এই বলিয়া শুক্র কচকে সঞ্জীবনী বিদ্যা শিখাইয়া দিলেন। তারপর কচ বাহিরে আসিয়া, সেই বিদ্যার দ্বারা শুক্রকে বাঁচাইলেন। বাঁচিয়া উঠিয়া শুক্রের এইরূপ চিন্তা হইল—
“তাই ত। আমি মদ খাই বলিয়াই ও আজ এমন কুকর্ম করিয়া বসিলাম। এখন হইতে এমন জঘন্য জিনিস যে ব্রাহ্মণে খাইবে, তাহার ইহকাল পরকাল দুইই নষ্ট হইবে।”
তারপর তিনি দানবদিগকে, ডাকিয়া এমনই তিরস্কার করিলেন যে, আর তাহারা কচের কোন অনিষ্ট করিতে সাহস পাইল না। দেখিতে দেখিতে এক হাজার বৎসর নির্বিঘ্নে কাটিয়া গেল।
এক হাজার বৎসরের পর কচ শুক্রের নিকটে বিদায় লইয়া ঘরে ফিরিবার সময়, দেবযানী তাঁহাকে বলিলেন—
“কচ, আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি আমাকে বিবাহ করিয়া তোমার সঙ্গে লইয়া যাও।”
দেবযানীর কথা শুনিয়া কচ বলিলেন, “দিদি তোমার পিতাকে আমি যেমন মান্য ও ভক্তি করি, তোমাকেও তেমনি মান্য ও ভক্তি করি। তোমার পিতা আমার গুরু, সুতরাং তিনিও আমার পিতা, আর তুমি আমার দিদি। আমাকে এমন কথা বলা তোমার উচিত হয় না।”
ইহাতে দেবযানী নিতান্তই দুঃখিত হইতেছেন দেখিয়া কচ তাঁহাকে অনেক বুঝাইলেন। শেষে তিনি বলিলেন—
“দিদি, তোমাদের এখানে এতদিন বড়ই সুখে ছিলাম। এখন অনুমতি কর গৃহে যাই, আর আশীর্বাদ কর, যেন পথে আমার কোন বিপদ না হয়, মাঝে মাঝে আমাকে স্মরণ করিও, আর সাবধানে গুরুদেবের সে করিও।”
কিন্তু কচের কোন কথাতেই দেবযানী শান্ত হইলেন না। শেষে মনের দুঃখে তিনি কচকে এই বলিয়া শাপ দিলেন যে—
“কচ, তুমি যখন আমাকে পরিত্যাগ করিয়া গেলে, তখন তোমার সঞ্জীবনী বিদ্যায় কোন ফল হইবে না।”
এ কথায় কচ বলিলেন, “আমার বিদ্যায় কান ফল না হউক, তাহাতে দুঃখ নাই। আমি অন্যকে এই বিদ্যা শিখাইলে, তাহার বিদ্যার ফল হইবে। আর তুমি যেমন আমাকে শাপ দিলে, তেমনি আমিও বলিতেছি যে, কোন ঋষিপুত্র তোমাকে বিবাহ করিতে আসিবে না।”
এই বলিয়া কচ সেখান হইতে চলিয়া আসিলেন। তাঁহাকে পাইয়া দেবতারা যে খুব আনন্দিত হইলেন, এ কথা বলাই বাহুল্য।
সেই সঞ্জীবনী বিদ্যার জোরে কতজন মরা দেবতা বাঁচিয়াছিলেন, আমি তাহা বলিতে পারি না। কিন্তু দেখা যায় যে এই ব্যবস্থায় তাঁহারা সন্তুষ্ট হইতে পারেন নাই। একজন মরিয়া গেলে পরে, আর একজন আসিয়া তাঁহাকে বাঁচাইয়া দিবে, ইহা খুবই ভাল কথা, তাহাতে সন্দেহ কি? কিন্তু একেবারেই যদি না মরিতে হয়, তবে যে ইহার চেয়ে অনেক সুবিধা হয়, এ কথা সকলেই বুঝিতে পারে।