পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০২
উপেন্দ্রকিশোর বচনাসমগ্র

আপনারা তাহার উপর সন্তুষ্ট হউন।”

 ধার্মিকের রাগ বেশিক্ষণ থাকে না। সুতরাং কশ্যপের কথায় বালখিল্যগণ তখনই আহ্লাদের সহিত ইন্দ্রকে ক্ষমা করিলেন। তারপর তাহারা কশ্যপকে বিনয় করিয়া বলিলেন যে, “আমরা দুইটি জিনিসের জন্য এই যজ্ঞ আরম্ভ করিয়াছিলাম, নতুন একটি ইন্দ্র, আর আপনার একটি পুত্র। এ অবস্থায আপনার যাহা ভাল বোধ হয়, তাহা করুন।”

 সুতরাং স্থির হইল যে, এই নূতন ইন্দ্রটি যেমন পাখির ইন্দ্র হইবে, তেমনি কশ্যপের পুত্রও হইবে। সেই পুত্রই গরুড়, সে পক্ষিগণের ইন্দ্র।

 গরুড়ের শরীর অতিশয় প্রকাণ্ড ছিল, আর তাহা সে ইচ্ছামত ছোট বড় করিতে পারিত। আগুনের মত লাল আর উজ্জ্বল তাহার গায়ের রঙ ছিল। সে বিদ্যুতের মতন বেগে ছুটিতে পারিত, আর যখন যেমন ইচ্ছা রূপ ধরিতে পারিত। জন্মমাত্রেই সে আকাশে উঠিয়া, আনন্দে চিৎকার করিতে লাগিল।

 এদিকে দেবতারা গরুড়কে দেখিয়া মনে করিলেন যে, উহা বুঝি আগুন। তাই তাহারা ব্যস্ত ভাবে অগ্নির নিকট গিয়া বলিলেন, “আজ কেন তোমার এত তেজ দেখিতেছি? তুমি কি আমাদিগকে পোড়াইয়া মারিবার ইচ্ছা করিয়াছ?”

 এ কথা শুনিয়া অগ্নি বলিলেন, “আপনারা ব্যস্ত হইবেন না উহা আগুন নহে কশ্যপের পুত্র গরুড়। ইনি দেবতাদিগের উপকারী বন্ধু, সুতরাং আপনাদের কোন ভয় নাই।”

 তখন তাহারা সকলে গরুড়ের নিকট গিয়া তাহার নানারূপ প্রশংসা করিতে করিতে বলিলেন, “বাপু তোমাকে দেখিয়া আমরা বড়ই ভয় পাইয়াছি, আর তোমার তেজে অস্থির হইয়াছি। সুতরাং তুমি দয়া করিয়া তোমার শরীরটাকে একটু ছোট কর, আর তেজ একটু কমাও।”

 তাহাতে গরুড় বলিল, “এই যে, মহাশয়, আমি এখন ছোট হইয়া গিয়াছি। আপনাদের আর ভয় পাইতে হইবে না।” এই বলিয়া সে তাহার মাতা বিনতার নিকট চলিয়া গেল।

 বিনতার দিন যে তখন কি দুঃখে যাইতেছিল, তাহা না বলিলে কেহ বুঝিতে পারিবে না। বাসন মাজা, জল টানা প্রভৃতি দাসীর যে কাজ, তাহা ত তাঁহাকে করিতেই হইত। ইহার উপর আবার কদ্রু যখন তখন বলিয়া বসিতেন, “আমি অমুক জায়গায় যাইব, আমাকে পিঠে করিয়া লইয়া চল।”

 একদিন বিনতা গরুড়ের নিকট বসিয়া আছেন এমন সময় কদ্রু তাঁহাকে ডাকিয়া বলিলেন, “দেখ বিনতা, সমুদ্রের মধ্যে একটা অতি সুন্দর দ্বীপ আছে, সেখানে অনেক নাগ বাস করে। আমাকে সেইখানে লইয়া যাইতে হইবে।”

 তখনই কদ্রু, বিনতার পিঠে উঠিয়া বসিলেন, আর কতকগুলি সাপ (কদ্রুর পুত্র) গরুড়ের পিঠে গিয়া চড়িল। তাহাদিগকে লইয়া দুইজনকে সেই দ্বীপে যাইতে হইল।

 দ্বীপে গিয়া সাপেরা কিছুকাল আমোদ আহ্লাদ করিয়া গরুড়কে বলিল, “তুমি আকাশে উড়িতে পার, তোমার ত না জানি ইহার চেয়ে কতই ভাল ভাল জায়গার কথা জানা আছে। সেই-সকল জায়গায় আমাদিগকে লইয়া চল।”

 ইহাতে গরুড় নিতান্ত দুঃখিত হইয়া তাহার মাকে জিজ্ঞাসা করিল, “মা, সাপেরা কেন এমন করিয়া আমাকে আজ্ঞা দিবে, আর আমাকেই বা কেন তাহা মানিতে হইবে, তাহা