পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫০৫

 এইরূপে বিশাল তিনটি বোঝা লইয়া বেচারা ক্রমাগত উড়িতেছে, কোথাও বসিবার জায়গা পায় না। এমন সময় সে দেখিল যে, গন্ধমাদন পর্বতে বসিয়া কশ্যপ তপস্যা করিতেছেন। কশ্যপ তাহার অবস্থা দেখিয়া বলিলেন, “বৎস, করিয়াছ কি? ঐ ডালে বালখিল্যগণ রহিয়াছেন, উঁহারা যে তোমাকে এখনি শাপ দিয়া ভস্ম করিবেন!”

 তারপর তিনি বালখিল্যদিগকে বলিলেন, “আপনারা অনুগ্রহ করিয়া গরুড়কে অনুমতি দিন, সে এই হাতিটাকে আর কচ্ছপটাকে খাইলে লোকের উপকার হইবে!”

 এ কথায় বালখিল্যগণ, গরুড়ের উপর সন্তুষ্ট হইয়া, সেই ডাল ছাড়িয়া হিমালয়ে চলিয়া গেলেন।

 তারপর গরুড় কশ্যপকে বলিল, “ভগবন্, এখন এই ডাল কোথায় ফেলি?”

 ইহাতে কশ্যপ একটা পর্বতেব কথা বলিয়া দিলেন। সে পর্বতে ডাল ফেলিয়া, গরুড় গজ-কচ্ছপ ভক্ষণ করিল।

 তারপর যখন গরুড় আবার নূতন বলের সহিত অমৃত আনিতে যাত্রা করিল তখন তাহাকে দেখিয়া দেবতাগণ বড়ই চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। ইন্দ্র বৃহস্পতিকে বলিলেন, “ওটা কি আসিতেছে?”

 বৃহস্পতি বলিলেন, “কশ্যপের পুত্র গরুড় অমৃত লইতে আসিতেছে, আর তাহা লইয়াও যাইবে।”

 বৃহস্পতির কথায় তখনই এই বলিয়া অমৃতের প্রহরীদিগের উপর তাড়া পড়িল যে, “ভয়ঙ্কর একটা পক্ষী অমৃত লইতে আসিতেছে। সাবধান! সে যেন তাহা চুরি করিতে না পারে।”

 কেবল প্রহরীদিগকে সতর্ক করিয়াই দেবতাগণ সন্তুষ্ট রহিলেন না, তাঁহারা নিজেরাও অস্ত্রশস্ত্র লইয়া অমৃত রক্ষার জন্য প্রস্তুত হইলেন। ইন্দ্র বজ্র হাতে এবং অন্যান্য দেবতারা অসি, চক্র, ত্রিশূল শক্তি, পবিঘ প্রভৃতি ভয়ঙ্কর অস্ত্র লইয়া, অমৃতের চারিদিকে দাঁড়াইলে, বাস্তবিকই তাঁহাদিগকে অতি ঘোরতর দেখা যাইতে লাগিল।

 কিন্তু গরুড় যে কতখানি ভয়ানক, দূর হইতে দেবতারা তাহা ভাল করিয়া বুঝিতে পারেন নাই। সুতরাং সে কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলে তাঁহারা মাথা ঠিক রাখিতে না পারিয়া নিজেরাই কাটাকাটি করিতে লাগিলেন। এদিকে গরুড় বিশ্বকর্মা বেচারাকে সামনে পাইয়া, চক্ষের পলকে তাঁহার দুর্দশার একশেষ করিয়া দিল! বেচারা কারিকর লোক যুদ্ধ করার অভ্যাস নাই, তথাপি তিনি কিছুকাল ভযানক যুদ্ধ করিয়াছিলেন; কিন্তু শেষে অজ্ঞান হইয়া গেলেন।

 অপরদিকে গরুড়ের পাখার বাতাসে ধূলা উড়িয়া, অন্যানা দেবতাদিগেরও অজ্ঞান হইতে আর বেশি বাকি নাই। অমৃতের প্রহরীদিগের চক্ষুও ধূলায় অন্ধ হইয়া যাইবার উপক্রম হইয়াছে।

 এমন সময় পবন আসিয়া ধূলা উড়াইয়া দিলে, দেবতারা সাহস পাইয়া, গরুড়কে আক্রমণ করিলেন। কিন্তু তাঁহাদের অস্ত্রের ঘায় গরুড় কিছুমাত্র কাতর না হইয়া, পাখার ঝাপটে তাঁহাদিগকে উড়াইয়া ফেলিতে লাগিল। ইহাতে তাঁহাদের নানারকম দুর্গতি হওয়ায় তাঁহারা অমৃতের মায়া ছাড়িয়া দিয়া, উৎসাহের সহিত পলায়ন করিতে আরম্ভ করিলেন। গন্ধর্ব ও

উপেন্দ্র—৬৪