পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সাধাগণ পলাইলেন পূর্বদিকে, রুদ্র ও বসুগণ দক্ষিণদিকে, আদিত্যগণ পশ্চিমদিকে, আর অশ্বিনীকুমার দুইভাই উত্তরদিকে।

 তারপর নয়জন যক্ষ আসিয়া গরুড়কে আক্রমণ করিয়াছিল। তাহারা মারা গেলে, আর কেহ যুদ্ধ করিতে আসিল না।

 তখন গরুড় অমৃতের কাছে আসিয়া দেখিল যে, উহা ভয়ঙ্কর আগুন দিয়া ঘেরা; সেই আগুনের শিখায় আকাশ ছাইয়া গিয়াছে।

 গরুড় যেমন ইচ্ছা তেমনই চেহারা করিতে পারিত। সুতরাং সেই আগুন নিভইবার জন্য সে, তাহার একটা মাথার জায়গায়, আট হাজার একশতটা মাথা করিয়া ফেলিল। সেই আট হাজার একশত মুখে জল আনিয়া আগুনেব উপরে ঢালিলে, আর তাহা নিভিতে অধিক বিলম্ব হইল না।

 আগুন নিভিলে দেখা গেল যে, একখানি ক্ষুরের মত ধারালো লোহার চাকা বনবন করিয়া অমৃতের উপর ঘুরিতেছে। অমৃতের নিকট চোর আসিলেই সেই চাকায় তাহার গলা কাটিয়া যায়।

 সৌভাগ্যের বিষয়, সেই চাকার মাঝখানে একটা ছিদ্র ছিল, গরুড় সেই ছিদ্র দেখিবামাত্র, মৌমাছির মত ছোট হইয়া, তাহার ভিতর দিয়া ঢুকিয়া পড়িল! ঢুকিয়া তাহার বিপদ বাড়িল কি কমিল, তাহা বলা ভারি শক্ত। সেই চাকার নীচেই এমন ভয়ঙ্কর দুইটা সাপ ছিল যে, তাহাদের মুখ দিয়া আগুন আর চোখ দিয়া ক্রমাগত বিষ বাহির হইতেছিল। তাহারা একটিবার কাহারও পানে তাকাইলেই সে ভস্ম হইয়া যাইত। কিন্তু গরুড় তাহাদিগকে তাকাইবার অবসর দিলে ত! সে তাহার পূর্বেই ধূলা দিয়া ও তাহাদিগকে অন্ধ করিয়া দিয়াছিল। ধূলার কাছে সাপেরা নাকি বড়ই জব্দ থাকেন! বাছাদের চক্ষে পলক পড়ে না, কাজেই চক্ষে ধূলা ছুঁড়িয়া মারিলেই তাঁহাদের সর্বনাশ উপস্থিত হয়।

 গরুড় যেই দেখিল যে, সাপগুলি তাহাদের চোখ লইয়া বিপদে পড়িয়াছে, অমনি সে তাহাদিগকে খণ্ড খণ্ড করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলিল। তখন আর তাহার অমৃত লইয়া যাইতে কোন বাধা রহিল না।

 গরুড় অমৃত লইয়া আকাশে ছুটিয়া চলিয়াছে, এমন সময়ে নারায়ণের সহিত তাহার দেখা হইল। নারায়ণ তাহার বীরত্ব দেখিয়া অতিশয় সস্তুষ্ট হইয়াছিলেন, সুতরাং তিনি তাহাকে বলিলেন, “তুমি আমার নিকট বর লও, আমি তোমাকে বর দিব।”

 এ কথায় গরুড় বলিল, “আমি অমর হইতে, আর তোমার চেয়ে উঁচুতে থাকিতে চাহি; আমাকে সেই বর দাও।”

 নারায়ণ বলিলেন, “আচ্ছা তাহাই হইবে।”

 তারপর গরুড় নারায়ণকে বলিল, “তোমাকেও আমার বড় ভাল লাগিয়াছে, তাই আমিও তোমাকে বর দিব। তুমি কি বর চাহ?”

 নারায়ণ বলিলেন, “তুমি আমার বাহন (যে জন্তুর উপরে চড়িয়া চলাফেরা করা যায়) হইলে বেশ সুবিধা হইত। কিন্তু তোমাকে যে বর দিয়াছি, তাহাতে আর তোমার উপরে চড়িবার উপায় থাকে না; কাজেই তুমি আমার রথের চূড়ায় বসিয়া থাকিবে, আর জিজ্ঞাসা করিলে বলিবে যে, তুমি আমার বাহন।”