পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫১৭

কাঁদিতেছে, তাহার ত কথাই নাই; কিন্তু কিছুতেই তাহারা রক্ষা পাইতেছে না। সাদা, হলদে, নীল, কালো, ছোট, বড়, মাঝারি, সকলরকমের সাপ হাজারে হাজারে আগুনে পুড়িয়া মরিল।

 সে সময়ে সাপের চিৎকারে আর কোন শব্দই শুনিবার উপায় রহিল না, পোড়া সাপের গন্ধে সে স্থানে টিকিয়া থাকা ভার হইয়া উঠিল। হায়! মায়ের শাপ কি দারুণ শাপ!

 কিন্তু যাহার জন্য এত আয়োজন, সেই তক্ষক এতক্ষণ কি করিতেছিল? যজ্ঞের কথা শুনিবামাত্র আর সকলের আগে, উহারই প্রাণ উড়িয়া গিয়াছিল, সে তখনই নিতান্ত ব্যস্তভাবে ইন্দ্রের নিকট উপস্থিত হইয়া, হাঁপাইতে হাঁপাইতে জোড় হাতে বলিল, “দোহাই দেবরাজ! আমাকে রক্ষা করুন! জনমেজয় আমাকে পোড়াইয়া মারিবার আয়োজন করিতেছে।”

 ইন্দ্র বলিলেন, “তোমার কোন ভয় নাই, তুমি আমার এইখানে থাক।”

 ইহাতে তক্ষক কতকটা নিশ্চিন্ত হইয়া ইন্দ্রের পুরীতেই বাস করিতে লাগিল।

 এদিকে ক্রমাগতই সাপ আসিয়া যজ্ঞের আগুনে পড়িতেছে। এইরূপে কয়েকঘণ্টার ভিতরেই অধিকাংশ সাপ মরিয়া গেল, অল্পই বাকি রহিল। সাপের রাজা বাসুকি এ-সকল ঘটনা দেখিয়া বার বার অজ্ঞান হইয়া যাইতে লাগিলেন। সাপেদের মধ্যে কেহ যে রক্ষা পাইবে এমন আশা তাঁহার রহিল না। তাঁহার কেবল ইহাই মনে হইতে লাগিল, “এইবার বুঝি আমার ডাক পড়ে।” এমন সময় তাঁহার আস্তিকের কথা মনে পড়িল।

 বাস্তবিক, আস্তিক যদি সর্পগণকে রক্ষা করিবার জন্যই জন্মিয়া থাকেন, তবে আর তাহার বিলম্ব করিবার সময় ছিল না। এই বেলা গিয়া একটা কিছু না করিলে, আর তাহার সে কার্য করিবার অবসরই থাকিত না। সুতরাং বাসুকি তাড়াতাড়ি তাহার ভগিনীকে ডাকিয়া বলিলেন, “আর দেখিতেছ কি বোন? শীঘ্র আস্তিককে ইহার উপায় করিতে বল!”

 এ কথায় বাসুকির ভগিনী তখনই আস্তিকের নিকট গিয়া বলিলেন, “বাছা, সর্বনাশ উপস্থিত! তুমি যে কার্যের জন্য জন্মিয়াছিলে, শীঘ্র তাহা না করিলে ত আর উপায় দেখিতেছি না!”

 ইহাতে আস্তিক একটু আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “আমি কি কার্যের জন্য জন্মিয়াছি মা? বল, আমি এখনই তাহা করিতেছি।”

 তখন আস্তিকের মাতা তাঁহাকে কদ্রুর শাপের কথা, আর জনমেজয়ের যজ্ঞের কথা আর তাঁহার দ্বারা যে সেই যজ্ঞ বারণ হইবে সেই কথা, আগাগোড়া শুনাইলেন। তাহা শুনিয়া আস্তিক বাসুকির নিকট গিয়া বলিলেন, “মামা আপনি আর দুঃখ করিবেন না। এই আমি চলিলাম—যেমন করিয়াই হউক, সে যজ্ঞ আমি বারণ করিয়া আসিব, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই।”

 এই বলিয়া আস্তিক জনমেজয়ের যজ্ঞের স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বড় বড় মুনি ঋষিতে সে যজ্ঞস্থান পরিপূর্ণ ছিল। আর তাহার দরজায় যমদূতের মতন সিপাহী সকল ঢাল তলোয়ার হাতে পাহারা দিতেছিল। বালক আস্তিককে দেখিয়াই তাহারা ধমক দিয়া বলিল, “এইয়ো! কোথায় যাইতেছ?”

 আস্তিক তাহাতে কিছুমাত্র ভয় না পাইয়া বলিলেন, “তোমাদের জয় হউক দারোয়ানজী। যজ্ঞটি যেমন জমকালো, তোমরা তাহার উপযুক্ত দারোয়ান। এমন সুন্দর যজ্ঞও কেহ দেখে