পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫২১

 এ কথায় সগর রাজা অস্থির হইয়া বলিলেন, “দূর হ তোরা এখন হইতে! ঘোড়া না লইয়া তোরা আর দেশে মুখ দেখাইতে পাইবি না।”

 সুতরাং আবার ষাট হাজার ভাই ঘোড়ার সন্ধানে বাহির হইল। খুঁজিতে খুঁজিতে তাহারা আবার সমুদ্রে উপস্থিত হইয়া দেখিল যে, তাহার এক জায়গায় একটি গভীর গর্ত রহিয়াছে। তখন ষাট হাজার ভাই, ষাট হাজার কোদাল লইয়া সেই গর্তের চারিধারে খুঁড়িতে আরম্ভ করিল। কিন্তু অনেক খুঁড়িয়াও তাঁহারা সেই সর্বনেশে গর্তের তলা পাইল না। দিন গেল মাস গেল, বৎসর চলিয়া গেল, তথাপি সেই গর্তের ভিতরে উঁকি মারিলে, যেমন অন্ধকার ছিল, তেমনি অন্ধকার দেখা যায়।

 ইহাতে তাহারা রাগের ভরে আরো বেশি করিয়া খুঁড়িতে লাগিল, গর্ত যতই অন্ধকার দেখা যায়, তাহারা ততই খালি বলে, “খোঁড়্, খোঁড়্, খোঁড়্!” এমনি করিয়া খুঁড়িতে খুঁড়িতে তাহারা একেবারে পাতালে গিয়া উপস্থিত হইল। পাতালে গিয়াই তাহারা দেখিল যে, সেখানে কপিল মুনি বসিয়া আছেন, আর ঘোড়াটি তাঁহার কাছেই ঘাস খাইতেছে। ঘোড়া দেখিয়া আর কি তাহারা স্থির থাকিতে পারে? তখনই কপিল যে সেখানে বসিয়া আছেন তাহা যেন তাহারা দেখিয়াও দেখিতে পাইল না। কপিলকে অগ্রাহ্য করিয়াই তাহারা ঘোড়া ধরিতে ছুটিয়া চলিল।

 ইহাতে কপিল রাগে কাঁপিতে কাঁপিতে দুই চক্ষু লাল করিয়া ভীষণ ভ্রুকূটির সহিত উহাদিগের পানে তাকাইবামাত্র সেই ষাট হাজার রাজপুত্র পুড়িয়া ছাই হইয়া গেল।

 যখন এই ভয়ঙ্কর ঘটনা হয়, তখন নারদ মুনি সেইদিক দিয়া যাইতেছিলেন। তিনিই রাজপুত্রগণের মৃত্যুর সংবাদ সগরকে শুনান। পুত্রদিগের মৃত্যুর কথা শুনিয়া সগর দুঃখে অনেকক্ষণ কথা কহিতে পারিলেন না। তারপর নিজের নাতি অংশুমানকে ডাকিয়া তিনি বলিলেন, “এখন ঘোড়া না আনিতে পারিলে তা আর উপায় দেখি না।”

 শৈব্যার যে একটি পুত্র হয়, তাহার নাম ছিল অসমঞ্জ, অসমঞ্জ এমনই দুষ্ট ছিল যে, সে ছোট ছোট ছেলেপিলের গলা ধরিয়া তাহাদিগকে জলে ফেলিয়া দিত। তাহার জ্বালায় অস্থির হইয়া সকলে সগরের নিকট নালিশ করাতে তিনি তাহাকে দেশ হইতে তাড়াইয়া দিলেন। অংশুমান সেই অসমঞ্জর পুত্র।

 সগরের কথায় অংশুমান সেই গর্তের ভিতর দিয়া পাতালে চলিয়া গেলেন। কপিল তখনো সেখানে বসিয়া ছিলেন, আর ঘোড়াটাও তাঁহার কাছে ছিল। অংশুমান মুনিকে দেখিবামাত্র ভক্তিভরে তাঁহাকে প্রণাম করাতে, মুনি তাহার উপর সস্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, বাঃ, বেশ ত ছেলেটি! তুমি কি চাও বৎস?”

 অংশুমান জোড়হাতে বলিলেন, “ভগবন্, আপনি দয়া করিয়া ঘোড়াটিকে আমাকে দিলে আমাদের যজ্ঞ শেষ হইতে পারে।”

 মুনি বলিলেন, “বটে? তোমাদের যজ্ঞের ঘোড়া? এখনি তুমি ওটাকে নিয়া যাও। তোমার আর কিছু চাই?”

 অংশুমান জোড়হাতে বলিলেন, “ভগবন্ দয়া করিয়া যদি আমার খুড়া মহাশয়দিগকে উদ্ধার করিয়া দেন তবে বড় ভাল হয়।”

 মুনি বলিলেন, “তুমি যখন চাহিতেছ তখন তাহাও হইবে কিন্তু সে এখন নহে, আর তাহা

উপেন্দ্র-৬৬