এ কথা শুক্র দেবযানীকে বলিলে, তিনি বলিলেন, “বৃষপৰ্বা যদি নিজের আমার নিকট আসিয়া এ কথা বলেন, তবে আমি ইহা বিশ্বাস করিতে পারি।”
তাহা শুনিয়া বৃষপৰ্বা বলিলেন, “তোমার কি ইচ্ছা হয় বল, উহা যত বড় জিনিসই হউক, আমি নিশ্চয় তাহা তোমাকে দিব।”
তখন দেবযানী বলিলেন, “আমি এই চাই যে, শৰ্মিষ্ঠা একহাজার অসুর-কন্যা লইয়া আমার দাসী হইবে। আমার বিবাহের পর যখন আমি স্বামীর গৃহে যাইব, তখনো সে এক হাজার অসুর-কন্যা সমেত আমার দাসী হইয়া আমার সঙ্গে যাইবে।”
এ কথা শুনিয়া বৃষপৰ্বা তখনই একটি দাসীকে বলিলেন, ‘তুমি শীঘ্র শৰ্মিষ্ঠাকে ডাকিয়া আন।’
দাসী রাজার আজ্ঞায় শৰ্মিষ্ঠার নিকট গিয়া বলিল, ‘রাজকন্যা, মহারাজ ডাকিতেছেন, তুমি শীঘ্র চল। দেবযানীকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য তোমাকে তাঁহার দাসী হইতে হইবে, নহিলে অসুরদিগের বড়ই বিপদ, দেবযানীর কথায় শুক্র আমাদিগকে ছাড়িয়া যাইতেছিলেন।’
এ কথায় শৰ্মিষ্ঠা বলিলেন, ‘আমার জন্য শুক্র আর দেবযানী চলিয়া যাইবেন, ইহা কখনই হইতে পারে না। তাহার চেয়ে আমাব দাসী হইয়া থাকাই ভাল।’
এই বলিয়া শৰ্মিষ্ঠা এক হাজার সখী সমেত দেবযানীর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলেন, ‘গুরুকন্যা, আমি আমার এই একহাজার সখী লইয়া তোমার দাসী হইতেছি। তুমি স্বামীর ঘরে যাইবার সময় আমাদিগকে সঙ্গে লইয়া যাইও।’
শৰ্মিষ্ঠাব কথায় দেবযানী বলিলেন, ‘সে কি? তুমি রাজার মেয়ে হইয়া কি করিয়া দাসী হইতে যাইবে?’
শৰ্মিষ্ঠা বলিলেন, ‘আমি দাসী হইলে যদি আমার আত্মীয়গণের বিপদ নিবারণ হয়, তবে আমার তাহাই করা উচিত।’
এইরূপে দানবদিগের উপকারের জন্য শর্মিষ্ঠা দেবযানীর দাসী হইয়া তাঁহার সেবা করিতে লাগিলেন দেবযানী কোথাও বেড়াইতে গেলে, শৰ্মিষ্ঠা একহাজার সখী লইয়া তাঁহার সঙ্গে যাইতেন, দেবযানী শুইয়া বা বসিয়া থাকিলে শৰ্মিষ্ঠা তাঁহার পা টিপিয়া দিতেন।
একদিন দেবযানী সেই বনে আবার বেড়াইতে গেলেন। শৰ্মিষ্ঠা ও তাঁহার সখীগণ দেবযানীর সঙ্গে গিয়া তাঁহার সেবা করিতে লাগিলেন।
সেদিনও মহারাজ যযাতি সেই বনে শিকার করিতে আসিয়াছেন, আর জল খুঁজিতে খুঁজতে সেই কন্যাগণের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন। প্রথমে যখন যযাতির সহিত দেবযানীর সাক্ষাৎ হইয়াছিল, তখন দেবযানীব যার পর নাই দুঃখের অবস্থা। আর এখন তিনি পরম সুখে বসিয়া একহাজার সখী সমেত রাজকন্যার সেবা গ্রহণ করিতেছেন। সুতরাং, হঠাৎ তাঁহাকে দেখিয়া যযাতির চিনিতে না পারারই কথা।
কিন্তু যযাতিকে দেবযানীর না চিনিতে পারার কোন কারণ ছিল না। যযাতির দয়ায় মৃত্যু হইতে রক্ষা পাওয়া অবধি দেবযানী তাঁহাকে বড় ভালোবাসিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। যযাতিকে আবার দেখিয়া তাঁহার সেই ভালোবাসা আরো বাড়িয়া গেল।
এই সময়ে শুক্রাচার্য সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি যখন দেখিলেন যে, তাঁহার কন্যা যযাতিকে ভালোবাসেন, আর যযাতিও তাঁহার কন্যাকে ভালোবাসেন, তখন