পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫২৭

 তারপর দেবযানীর নিকট সকল কথা শুনিয়া, শুক্র যযাতিকে এই বলিয়া শাপ দিলেন, “মহারাজ! তুমি ধাৰ্মিক হইয়া অধৰ্ম করিয়াছ। এই দোষে এখনই দারুণ জরা (ভয়ানক বুড়া মানুষের অবস্থা) আসিয়া তোমাকে ধবিবে।”

 শুক্র এ কথা বলিবামাত্র রাজার চুল পাকিয়া গেল, দাঁত পড়িয়া গেল, চোখ ঝাপসা হইয়া গেল, চামড়া ঝুলিয়া পড়িল, তাঁহার হাত পা আর মাথা কাঁপিতে লাগিল। তাঁহার মুখের ভিতরে কথা জড়াইয়া যাইতে লাগিল। তিনি আর কানে শুনিতে পান না;সোজা হইয়া দাঁড়াইতেও পারেন না।

 তখন যযাতি বিনয় করিয়া শুক্রকে বলিলেন, “ভগবন্, এই অবস্থায় আমার আর বঁচিয়া লাভ কি? আমি যে এখনো এই পৃথিবীর সুখ ভালো করিয়া ভোগ করিতে পারি নাই। দয়া করিয়া আমার শরীর হইতে এই জরা দূর করিয়া দিন।”

 শুক্র বলিলেন, “আমি যাহা বলিয়াছি, তাহা হইবেই। তবে তুমি ইচ্ছা করিলে, আমাকে স্মরণ করিয়া, এই জরা অন্য কাহাকেও দিতে পার। ইহাতে তোমার পাপ হইবে না।”

 রাজা বলিলেন, “তবে আমাকে এই অনুমতি দিন যে, আমার পাঁচ পুত্রের মধ্যে যে আমার জরা নিয়া আমাকে তাহার যৌবন দিতে সম্মত হইবে, সেই আমার রাজ্য পাইবে।”

 শুক্র বলিলেন, “আচ্ছা আমি তোমাকে এ বিষয়ে অনুমতি দিতেছি।”

 তারপর জরায় কাতর যযাতি দেশে ফিরিয়া, নিজের জ্যেষ্ঠ পুত্র যদুকে বলিলেন, “বৎস, দেখ শুক্রের শাপে আমার কি দশা হইয়াছে। পৃথিবীর সুখে এখনো আমার তৃপ্তি হয় নাই। তুমি যদি, একহাজার বৎসরের জন্য, আমার এই জরা নিয়া তোমার যৌবন আমাকে দাও, তবে আমি কিছু কাজকর্ম এবং সুখ ভোগ করিয়া লইতে পারি। একহাজার বৎসর পরে আবার তোমার যৌবন তোমাকে ফিরাইয়া দিব।”

 যদু বলিলেন, “মহারাজ, আমি আপনার জরা লইয়া কষ্ট পাইতে ইচ্ছা করি না। আপনার আরো অনেক পুত্র আছে, তাহাদিগকে আপনার জরা দিন।”

 এ কথায় যযাতি বলিলেন, “তুমি যখন আমার কথা অমান্য করিলে, তখন, তুমি বা তোমার বংশের কেহ, রাজ্য পাইবে না!”

 তারপর যযাতি তুর্বসুকে বলিলেন, “বৎস, তুমি আমার জরা গ্রহণ কর।”

 তুর্বসু বলিলেন, “মহারাজ, আমি তাহা করিতে পারিব না।”

 এ কথায় রাজা তুর্বসুকে এই বলিয়া শাপ দিলেন, “তোমার ছেলেপিলে হইবে না। আর তুমি পাপীদিগের রাজা হইবে।”

 তারপর দ্রুহ্য আর অনুকে ডাকিয়া রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু তাঁহারাও তাঁহার কথায় সম্মত হইলেন না। ইহাতে তিনি দ্রুহ্যকে বলিলেন, “তোমার কোন ইচ্ছাই পূর্ণ হইবে না। তোমার বংশে কেহই রাজা হইবে না। আর, যেখানে হাতি ঘোড়া, গাড়ি, পাল্কি কিছুই নাই, কেবল ভেলায় চড়িয়া আর সাঁতরাইয়া চলাফেরা করিতে হয়, সে দেশে গিয়া তোমাকে বাস করিতে হইবে।”

 আর অনুকে তিনি এই বলিয়া শাপ দিলেন, “তুমি যে জরা লইতে এত আপত্তি করিতেছে সেই জরা এখনই তোমাকে ধরিবে। আর তোমার ছেলেপিলে একটিও বাঁচিবে না।”

 এইরূপে পাঁচ ছেলের মধ্যে চারিজন যযাতির জরা লইতে অস্বীকার করিলেন। কিন্তু