পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৩৭

ঠকাইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। অশ্বিনীকুমারেরা স্বর্গের চিকিৎসক ছিলেন, কাজেই চিকিৎসায় তাঁহাদের ক্ষমতা অতি আশ্চর্য ছিল। তাঁহারা খানিক চিন্তা করিয়া সুকন্যাকে বলিলেন, “আচ্ছা আমরা যদি তোমার স্বামীকে যুবা এবং সুশ্রী করিয়া দেই, তবে কেমন হয়? একবার তোমার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিয়া দেখ ত, তিনি কি বলেন।”

 এ কথা সুকন্যা চ্যবনের নিকট বলিলে, তিনি বলিলেন, “বেশ কথা! আমি তাহাতে প্রস্তুত আছি। জিজ্ঞাসা কর, আমাকে কি করিতে হইবে?”

 অশ্বিনীকুমারেরা বলিলেন, “আর কিছুই করিতে হইবে না, কেবল একটিবার এই পুকুরের জলে ডুব দিতে হইবে।

 অশ্বিনীকুমারের কথায় চ্যবন পুকুরের জলে ডুব দিবামাত্র, সেই দুই দুষ্ট দেবতাও ঝুপ করিয়া সেই জলের ভিতরে ঢুকিয়া গেলেন। তারপর যখন তাঁহারা মুনির সঙ্গে জল হইতে উঠিয়া আসিলেন, তখন দেখা গেল যে, তিনজনেরই অবিকল একরকম চেহারা!

 দুষ্ট দেবতাগণ ভাবিছিলেন যে, চ্যবনের চেহারা ঠিক তাঁহাদের নিজেদের মত করিয়া দিলে, আর সুকন্যা তাঁহাকে চিনিতে পারিবেন না। কিন্তু যর্থার্থ বুদ্ধিমতী ধার্মিক স্ত্রীলোককে ফাঁকি দেওযা এত সহজ নহে। সুকন্যা দেখিলেন যে, চেহারা একরকম হইলেও চোখের ভাবে অনেক প্রভেদ আছে। চ্যবন তাহার দিকে যেমন স্নেহেব সহিত তাকাইতেন, সেই স্নেহের দৃষ্টি চিনিয়া লইতে সুকন্যার মত মেয়ের ভুল হইতে পাবে? তিনি একবার চ্যবনের চোখের দিকে তাকাইয়া অপার আনন্দের সহিত তাঁহার নিকট গিয়া দাঁডাইলেন।

 কিন্তু দুঃখের বিষয় চ্যবন দুর্বাসা ছিলেন না। তাহা হইলে দেবতা মহাশয়েরা তাঁহাদের উচিত সাজা তখনই হাতে হাতে পাইতেন। চ্যবন অতিশয় ভালমানুষ ছিলেন, তাই তিনি ইহার কিছুই না করিয়া, তাঁহাদিগকে বলিলেন, “ভগবন, আমি বুড়া ছিলাম, আপনারা আমাকে যুবা আর সুশ্রী করিলেন। দেবতাগণ সোমবস পান করেন, আপনাদিগকে তাহার ভাগ দেন না। আমি প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, আপনাদিগের জন্য সোমরসের ভাগ লইয়া দিব।”

 ইহাতে অশ্বিনীকুমারেরা অতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন।

 এদিকে চ্যবন আবার যুবা এবং দেখিতে অতি সুন্দর হইযাছেন এই আশ্চর্য সংবাদ দেখিতে দেখিতে মহাবাজ শর্যাতির নিকট গিয়া উপস্থিত হইল। সে সংবাদে তিনি এতই আনন্দিত হইলেন যে, সকলকে লইয়া চ্যবনের আশ্রমে আসিতে আর কিছুমাত্র বিলম্ব করিলেন না। তখন সকলের মনে কি যে আনন্দ হইল, তাহা লিখিয়া আর কত জানাইব? সেখানে কিছু কাল নানারূপ কথাবার্তায় অতিশয় সুখে কাটিলে, চ্যবন শর্যাতিকে বলিলেন, “মহারাজ, আমি আপনার জন্য একটা যজ্ঞ করিব, আপনি তাহার আয়োজন করুন।”

 রাজা আনন্দের সহিত অতি অল্প দিনের ভিতরেই যজ্ঞেব আয়োজন শেষ করিয়া দিলে চ্যবন যজ্ঞ করিতে আরম্ভ করিলেন। সে যজ্ঞ বড়ই চমৎকাব হইয়াছিল। আর তাহাতে যে একটি ঘটনা হইয়াছিল তা নিতান্তই অদ্ভুত।

 যজ্ঞে দেবতারা সকলেই উপস্থিত হইয়াছেন, তাঁহাদের জন্য অনেক কলসী সোমরস প্রস্তুত হইয়াছে। চ্যবন তাঁহাদের সম্মান বুঝিয়া সকলকেই সোমরস বাঁটিয়া দিতেছেন;তাঁহারাও আনন্দের সহিত তাহা পান করিতে আরম্ভ করিয়াছেন। ইহার মধ্যে দুইটি বাটিতে সোমরস ঢালিতে আরম্ভ করিয়া, চ্যবন বলিলেন, ইহা অশ্বিনীকুমারদিগকে দিতে হইবে।”