আয়ু দান কবিয়াছেন। অতএব, আপনি অনুমতি করুন, প্রমদ্ববা আবার জীবন লাভ করুন।
যম বলিলেন, ‘আচ্ছা, তবে তাহাই হউক।’
যমের মুখ দিযা এ কথা বাহির হইবামাত্র, প্রমদ্ববা চোখ রগড়াইতে রগড়াইতে উঠিয়া বসিলেন। তখন সকলে তাঁহাব চারিধারে বসিযা কাঁদিতেছিল। তাহাবা তাঁহাকে উঠিতে দেখিয়া নিতান্তই আশ্চর্য এবং আনন্দিত হইযাছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। সে আনন্দ সামলাইয়া উঠিতে তাহাদেব অনেক সময় লাগিযাছিল। কেননা, বিবাহেব দিনও ইহাব পবে দেখিতে দেখিতে আসিযা উপস্থিত হইল। রাজা-রাজড়ার বিবাহে অবশ্য খুব জমকালো রকমের ধুমধাম হয়। মুনিঋষিদেব বিবাহে অত ঘটা না হইবার কথা। কিন্তু রুরু আর প্রমদ্ববার বিবাহে সকলের মনে যেমন আনন্দ হইযাছিল আমি সাহস করিয়া বলিতে পাবি, কোন কালে আর কোন বিবাহে তাহার চেয়ে বেশি হয় নাই।
এইরূপ আনন্দের ভিতরে এই ব্যাপারের শেষ হইল। রুরুর মনে ইহাতে খুবই সুখ হইযাছিল এ কথা আমরা কল্পনা করিয়া লইতে পাবি। কিন্তু দুষ্ট সাপ তাঁহার প্রমদ্ববাকে কামড়াইয়া ক্ষণকালেব জন্য তাঁহাকে যে কষ্ট দিছিল তাহার কথা তিনি কিছুতেই ভুলিতে পারিলেন না। এই ঘটনাতে সর্পজাতি উপর তাঁহার এমনই বিষম রাগ হইয়া গেল যে, তিনি আর ঘরে থাকিতে না পারিয়া বিশাল ডাণ্ডা হতে সাপের বংশ ধ্বংস কবিতে বাহির হইলেন। সে সময়ে কোন হতভাগ্য সাপ তাঁহার সম্মুখে পড়িল, আর কি তাহার রক্ষা ছিল? সে ফোঁস করিবার আগেই সেই ভীষণ ডাণ্ডা ধাঁই শব্দে তাহার মাথায় পড়িয়া তাহার সর্পলীলা সাঙ্গ করিয়া দিত।
এইরূপে রুরু বন, জঙ্গল পাহাড় পর্বত খুজিযা কত সাপ যে সংহার করিলেন, তাহার লেখাজোখা নাই। একদিন তিনি সাপ খুঁজিতে খুঁজিতে গভীব বনের ভিতরে প্রবেশ করিয়া ‘ডুণ্ডুভ' নামক একটা সাপ দেখিতে পাইলেন। সাপটি নিতান্তই বুড়ো এবং অস্থিচর্মমসার হইযাছে, ভালো কবি নড়িতে চড়িতে পাবে না। সেই বুড়া ডুণ্ডুভ সাপকে দেখিবামাত্র, ও ক্রোধ ভরে তাঁহার সেই বিশাল ডাণ্ডা উঠাইয়া তাঁহাকে মারিতে গেলেন।
তাহা দেখিয়া সেই সাপ কহিল, ‘মুনি ঠাকুব, আমি ও তোমার কোন অনিষ্ট করি নাই, তবে কেন বিনা অপবাধে আমার প্রাণ বধ করিতে আসিতেছ?’
রুরু বলিলেন, ‘তাহা বলিলে কি হইবে? আমার প্রমদ্ববাকে সাপে কামড়াইযাছিল। সুতরাং দেখিতেছ ডাণ্ডা। আজ আর আমার হাতে তোমার রক্ষা নাই।’
সাপ কহিল, ‘ঠাকুর, আমরা ডুণ্ডুভ সাপ, কোনদিন কাহাবো হিংসা করি না। যাহারা কামড়ায় তাহারা অন্য সাপ। আমবা তাহাদের মত নহি, অথচ তাহাদের দোষেব জন্য অকারণ সাজা পাই। তুমি ধার্মিক লোক, আমাদের দুর্দশা দেখি কি তোমার দয়া হয় না?’
বাস্তবিকই সেই সাপটির কথা শুনিয়া রুরুর দয়া হইল। সুতং তিনি আর তাহাকে বধ করিয়া মিষ্টভাবে জিজ্ঞাসা কবিলেন, ‘তুমি কে? কি করিয়া তোমার এমন দুর্দশা হইল?’
সাপ কহিল, ‘পূর্বজন্মে আমি সহস্রপাদ নামে মুনি ছিলাম, ব্রাহ্মণের শাপে সর্প হইয়াছি।’
রুক বলিলেন, ‘তোমার কথা আমার বড়ই আশ্চর্য বোধ হইতেছে। ব্রাহ্মণ কেন তোমাকে শাপ দিলেন, আর সে শাপ দূব হইবার কোন উপায় আছে কি না— এ-সকল কথা শুনিতে পাইলে আমি অতিশয় সুখী হইব।’