নলকে খুঁজিতে খুঁজিতে তিনি দেখিলেন যে, পাঁচটি লোক সভায় বসিয়া আছেন। তাহাদিগকে দেখিতে ঠিক নলেরই মত। তিনি বুঝিতে পারিলেন, উঁহাদের মধ্যে একজন নল। আর চারিজন দেবতা। কিন্তু ইহার বেশি তিনি কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। তখন তিনি দুখানি হাত জোড় করিয়া দিয়া বলিলেন, “আমি নলকে ভালোবাসি আর মনে মনে তাহাকেই বরণ করিয়াছি। হে দেবতাগণ, আপনারা দয়া করিয়া তাহাকে দেখাইয়া দিন।”
দময়ন্তীর কথায় দেবতাগণের মন গলিল। তখন তিনি দেখিতে পাইলেন, সেই পাঁচজনের মধ্যে চারিজন শূন্যে বসিয়া আছে। তাহাদের চোখে পলক নাই; শরীরে ঘাম নাই, ছায়া নাই। তিনি বুঝিলেন; এই চারিজন দেবতা, অপরটি নল। তখন তিনি লজ্জায় মাথা হেঁট করিয়া অপার আনন্দের সহিত বরমাল্যখানি নলের গলায় পরাইয়া দিলেন। নল বলিলেন, “দময়ন্তি, যতদিন এই প্রাণ থাকিবে, ততদিন আমি তোমাকে ভালোবাসিব।”
দময়ন্তী বলিলেন, “আমার এই প্রাণ দিয়া তোমার সেবা করিব।” এদিকে দেবতারা আনন্দের সহিত বলিতেছেন, “বড়ই সুখের বিষয় হইল; যেমন কন্যা তেমনি বর মিলিল। রাজা মহাশয়েরা বলিতেছেন, “হায়! এত ক্লেশ করিয়া আসিলাম, আর অন্যে কন্যা লইয়া গেল!”
যাহা হউক কন্যা যখন মোটেই একটি, তখন রাজা মহাশয়দিগের প্রত্যেকেরই কন্যা পাওয়ার ত কোন কথা ছিল না; দুঃখ করিলে কি হইবে? দেবতারা কেহই দুঃখ করেন নাই। এমন-কি, যাঁহারা ফাকি দিয়া দময়ন্তীকে পাইবার জন্য এত চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাহারাই শেষে সন্তুষ্ট হইয়া নলকে বর দিতে লাগিলেন।
ইন্দ্র বলিলেন, “তুমি স্বর্গে গিয়া পরম সুখে থাকিবে।”
অগ্নি কহিলেন, “তুমি যাহাই রাঁধিবে তাহাই খাইতে অমৃতের মত হইবে।”,
বরুণ কহিলেন, “তুমি ডাকিলেই আমি আসিব। আর এই মালা লও; ইহার ফুল কখনো শুকাইবে না।”
তারপর মহাসমারোহে নল-দময়ন্তীর বিবাহ হইল। বিবাহের পরে সকলে নিজ নিজ দেশে চলিয়া গেলেন। নলও কিছুদিন বিদর্ভ দেশে থাকিয়া দময়ন্তীকে লইয়া মনের আনন্দে ঘরে ফিরিলেন।
দেশে ফিরিয়া তাহাদের সময় কিছুদিন বড়ই সুখে কাটিল। প্রজারা দু'হাত তুলিয়া আশীর্বাদ করিতে করিতে বলিতে লাগিল, “না জানি কতই পুণ্য করিয়াছিলাম, তাই এমন রাজা রানী পাইলাম।” শত্রুরা অস্ত্র ফেলিয়া দিয়া বলিল, “মারিলেও নল, রাখিলেও নল, এমন কাজ আর করিব না।”
ইহার উপর যখন তাহাদের ইন্দ্রসেন আর ইন্দ্রসেনা নামে একটি পুত্র আর একটি কন্যা হইল, তখন তাহাদের চাঁদমুখের দিকে তাকাইয়া তাহারা এই পৃথিবীতেই স্বর্গের সুখ পাইলেন।
কিন্তু সংসারের সুখকে বিশ্বাস করিতে নাই। সুখ যখন আসে তখন সে দুঃখকে আড়ালে করিয়া আনিতে প্রায়ই ভোলে না। নলের সুখের শুরু হইতেই কলি নামে কুটিল দেবতা তাহার সর্বনাশের সুযোগ খুঁজিতে ছিল।
সেই স্বয়ম্বরের দিন ইন্দ্র, যম, অগ্নি আর বরুণ স্বর্গে ফিরিয়া যাইবার সময় পথে কলি আর দ্বাপরের সঙ্গে তাহাদের দেখা হয়। কলিকে দেখিয়া ইন্দ্র বলিলেন, “কি হে কলি,