পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৫৩

সময় বেশ সুখে কাটিবে।”

 সুনন্দা একটিবার দময়ন্তীর মুখের দিকে তাকাইয়াই, ছুটিয়া গিয়া তাঁহার গলা জড়াইয়া ধরিলেন। তাহার পর হইতে আর সকল সময়েই দেখা যাইত যে, সুনন্দার একখানি হাত দময়ন্তীকে জড়াইয়া রহিয়াছে।

 এতদিন নল কি ভাবে ছিলেন?

 দময়ন্তীর নিকট হইতে পলায়ন করিয়া তিনি একটি অতি গভীর বনের ভিতরে প্রবেশ করেন। সেখানে গিয়া তিনি দেখিলেন, বনে ভয়ানক আগুন লাগিয়াছে, আর সেই আগুনের ভিতর কে যেন অতি কাতর স্বরে ডাকিয়া বলিতেছে, “হে মহারাজ নল, দয়া করিয়া আমাকে রক্ষা কর।”

 তিনি তৎক্ষণাৎ ‘ভয় নাই বলিয়া ছুটিয়া গিয়া দেখিলেন, একটি প্রকাণ্ড সাপ কুণ্ডলী করিয়া সেখানে পড়িয়া আছে। সাপটি তাহাকে দেখিয়া বিনয়ের সহিত বলিল, “মহারাজ, আমি কর্কোটক নামক নাগ; নারদের শাপে আমার চলিবার শক্তি গিয়াছে। আমি বহুকাল যাবৎ এইভাবে এইখানে পড়িয়া আছি তুমি আসিয়া আমাকে এখান হইতে সরাইলে তবে আমার শাপ দূর হইবার কথা। দোহাই মহারাজ, আমাকে বাঁচাও। আমি তোমার উপকার করিব।” এই বলিয়া সাপটি আঙ্গুলের মতন ছোট হইয়া গেল, আর নল অতি সহজেই তাহাকে আগুনের ভিতর হইতে লইয়া আসিলেন। সেই স্বয়ম্বরের সময় হইতেই অগ্নি নলের উপর বিশেষ সন্তুষ্ট ছিলেন তাই আগুনের শিখা তাহাকে দেখিয়াই দূরে চলিয়া গেল।

 এখন কর্কোটক নলকে বলিল, “মহারাজ এখন গণিয়া পা ফেলিতে ফেলিতে খানিক দূর চলিয়া যাও; তাহা হইলে আমি তোমার বিশেষ উপকার করিব।”

 সাপের কথায় নল গণিতে গণিতে দশ পা যাইবামাত্র সে কুট করিয়া তাহাকে কামড়াইয়া দিল। আর তৎক্ষণাৎ তাঁহার সেই দেবতার মতন সুন্দর চেহারা এমনি কালো আর কদাকার হইয়া গেল যে, কি বলিব।

 ইহাতে নল যার পর নাই আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “এই বুঝি তোমার উপকার? তা সাপের উপকার এমনি হইবে না ত কেমন হইবে?”

 কর্কোটক বলিল, “মহারাজ বিচার করিয়া তবে আমাকে তিরস্কার কর। ভাবিয়া দেখ আমার কামড়ে তোমার দুটি মহৎ উপকার হইয়াছে। এক উপকার এই যে, পুষ্করের লোক এখন আর তোমাকে চিনিতে পারিবে না। আর-এক উপকার এই যে, যে দুষ্ট তোমার শরীরে ঢুকিয়া তোমাকে এমন কষ্ট দিতেছে, এখন হইতে সেই দুষ্ট আমার বিষে জ্বলিয়া পুড়িয়া নাকালের একশেষ হইবে। তাহার প্রমাণ দেখ, আমার বিষে তোমার কোন কষ্ট হইতেছে না। ইহাতেই বুঝিতে পারিবে, বিষের মজাটা সেই দুষ্টই ষোল আনা পাইতেছে। আমার এই কামড়ের পর আর অন্য কোন জন্তু তোমাকে কামড়াইতে পারিবে না, আর তোমার শত্রুরাও ক্রমে জব্দ হইয়া যাইবে।”

 তখন নল বলিলেন, “কর্কোটক, বাস্তবিকই তুমি আমাকে কামড়াইয়া যথার্থ বন্ধুর কাজ করিয়াছ।”

 কর্কোটক বলিল, “মহারাজ, তুমি এখন অযোধ্যা নগরে রাজা ঋতুপর্ণের নিকট চলিয়া যাও; সেখানে ‘বাহুক নামে পরিচয় দিয়া ঋতুপর্ণের সারথি হইবে। ঘোড়া চালাইবার কার্যে

উপেন্দ্র—৭০