পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৫৯

হাত হইতে একেবারেই ছুটিয়া চলিয়া গেল।

 রাজা ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “আরে, আরে! গেল, গেল! বাহুক! বার্ষ্ণেয়, থামো, থামো! আমার চাদর উড়িয়া গিয়াছে। শীঘ্র রথ থামাইয়া তাহা লইয়া আইস।”

 বাহুক বলিল, “মহারাজ, চাদর ও আর এখন আনা সম্ভব হইবে না; এতক্ষণে তাহা চারিক্রোশ পিছনে পড়িয়া গিয়াছে।”

 ইহাতে রাজা বাহুকের ক্ষমতার কথা ভাবিয়া যেমন আশ্চর্য হইলেন তেমনি তাহারও নিতান্ত ইচ্ছা হইল যে, নিজের ক্ষমতার কিছু পরিচয় দিয়া বাহুক কে আশ্চর্য করেন। তাই তিনি পথের ধারে একটা বহেড়া গাছ দেখিতে পাইয়া বাহুককে বলিলেন, “বাহুক, দেখ ত আমি কেমন গণিতে পারি, এই বহেড়া গাছে পাঁচ কোটি পাতা আর দুই হাজার পঁচানব্বইটি ফল আছে। আর উহার তলায় একশত একটি ফল পড়িয়া আছে।”

 বাহুক তখনই রথ থামাইয়া বলিল, “মহারাজের কথা যদি সত্য হয়, তবে মহারাজের এই ক্ষমতা নিতান্ত আশ্চর্য বলিতে হইবে। সুতরাং, এ কথার পরীক্ষা হওয়া আবশ্যক। আমি এখনই এই গাছটাকে কাটিয়া দেখিব।”

 ইহাতে রাজা ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “বাহুক, এখন নহে। তাহা হইলে বড় বিলম্ব হইবে।” বাহুক বলিল, “মহারাজ একটু অপেক্ষা করুন; নাহয় বার্ষ্ণেয় মহারাজকে লইয়া বিদর্ভ দেশে যাউক।”

 রাজা আরো ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “আরে না, না! তাহা কেমন করিয়া হইবে? তুমি ছাড়া আর কেহই এ কাজ করিতে পারিবেন না। সূর্যোদয়ের পূর্বে আমাকে বিদর্ভ দেশে পৌঁছাইয়া দাও, তোমাকে খুশি করিব।”

 বাহুক বলিল, “মহারাজের কোন চিন্তা নাই;আমি গাছে পাতা আর ফল গণিয়া, মহারাজকে ঠিক পৌছাইয়া দিব।”

 রাজা আর কি করেন? বাহুকের আব্দার না রাখিলে তাহার কাজ হয় না। কাজেই তিনি তখন রাজি হইলেন। তখন বাহুক তাড়াতাড়ি রথ হইতে নামিয়া গাছটি কাটিয়া গণিয়া দেখিল রাজার কথাই ঠিক তাহাতে সে নিতান্ত আশ্চর্য হইয়া বলিল, “বলিল মহারাজ, আমি আপনাকে অশ্ব বিদ্যা (ঘোড়া চালাইবার বিদ্যা) শিখাইব, তাহার বদলে এই আশ্চর্য বিদ্যা আমাকে শিখাইতে হইবে।”

 অশ্ববিদ্যার কথা শুনিয়া রাজার আর আনন্দের সীমা রহিল না। তিনি তখনই বাহুককে দুই বিদ্যা শিখাইয়া দিলেন! একটি এই গণনাবিদ্যা আর একটি অক্ষবিদ্যা, অর্থাৎ পাশা বশ করিবার বিদ্যা।

 ঋতুপর্ণের নিকট হইতে নল অক্ষবিদ্যা শিখিবামাত্র, একটি আশ্চর্য ঘটনা হইল। কলি এতদিন পর্যন্ত, কর্কোটকের বিষে আর দময়ন্তী শাপে জ্বালাতন হইয়া অতিকষ্টে নলের শরীরে বাস করিতেছিল। এখন এই পবিত্র বিদ্যা তাহার দেহে প্রবেশ করাতে, দুষ্ট আর কিছুতেই সেখানে টিকিয়া থাকিতে পারিল না। সুতরাং সে তখনই কর্কোটকের বিষ বমি করিতে করিতে নলের শরীর হইতে বাহির হইয়া পড়িল। নল তাহাকে দেখিবামাত্র বলিলেন, “তবে রে দুষ্ট, তুমি এতনি আমাকে এই কষ্ট দিয়াছ, তাহার প্রতিফল এই লও।” এই বলিয়া তিনি কলিকে শাপ দিতে প্রস্তুত হইলে, সে ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে হাত জোড় করিয়া