পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৬১

যখন রথ চালাইতেন, তখন ঠিক এমনি শব্দ হইত। তখন হইতেই তিনি নিতান্ত ব্যস্ত হইয়া ঋতুপর্ণেব সারথিকে দেখিবার জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন, কিন্তু হায় বাহুককে দেখিয়া তাঁহার প্রাণের সকল আশা চলিয়া গেল। এই কদাকাব পুরুষ নল, এ কথা কি বিশ্বাস হয়। দময়ন্তী একবার ভাবিলেন, হয়ত এ ব্যক্তি নল অথবা ঋতুপর্ণ কাহারো নিকট হইতে ঠিক নলের মত অশ্ববিদ্যা শিক্ষা কবিয়াছে। তাহাব পবেই তাঁহার মন যেন বলিল, এই বাহুকই নল, ইহার চালচলন ঠিক নলের মত।

 ভাবিয়া চিন্তিয়া দময়ন্তী স্থির করিলেন যে, এই বাহুকের সম্বন্ধে বিশেষ করিয়া সংবাদ লইতে হইবে। তারপর তিনি কেশিনী নাম্নী একটি বুদ্ধিমতী দাসীকে ডাকিয়া বলিলেন, “কেশিনী, ঐ যে কালো বেঁটে লোকটি রথের ভিতরে বসিয়া আছে, আমার মন বলিতেছে, উনিই নল। তুমি উহার নিকট গিয়া উহার পরিচয় জিজ্ঞাসা কর। নলকে খুঁজিবার জন্য ব্রাহ্মণদিগকে পাঠাইবার সময় আমি তাহাদিগকে যে কথাগুলি পথেঘাটে বলিতে বলিয়াছিলাম—কথায় কথাই সেই কথাগুলি উহাকে শুনাইবে, আর তাহাতে উনি কি বলেন, বেশ করিয়া মনে রাখিবে।”

 এ কথায় কেশিনী তখনই বাহুকের নিকট চলিয়া গেল, আর দময়ন্তী ছাতে উঠিয়া দেখিতে লাগিলেন।

 বাহুকের নিকট গিযা কেশিনী বলিল, “মহাশয়। আপনারা কি জন্য এখানে আসিয়াছেন, আর কখন অযোধ্যা হইতে যাত্রা করিয়াছিলেন, আমাদের দময়ন্তী এ-সকল কথা জানিতে চাহে।”

 বাহুক বলিল, “আমাদের রাজা আজ সকালে এক ব্রাহ্মণের নিকট শুনিয়া ছিলেন যে, কাল দময়ন্তীর স্বয়ম্বর হইবে। তিনি তখনই রথে পক্ষিরাজ ঘোড়া জুতিয়া এখানে আসিয়াছে। আমি তাঁহার সারথি।’

 কেশিনী বলিল, “আপনার সঙ্গে এই লোকটি কে?”

 বাহুক বলিল, “ইহাব নাম বার্ষ্ণেয়। ইনি আগে মহারাজ নলের সারথি ছিলেন, এখন ঋতুপর্ণের সারথির কাজ করেন।”

 কেশিনী বলিল, “এমন লোক থাকি রাজা আপনাকে কি জন্য সারথি করিয়াছেন?

 বাহুক বলিল, “আমি অশ্ববিদ্যা খুব ভালোরকম শিখিয়াছি। আর রাঁধিতেও বেশ পারি। তাই রাজা আমাকেও রাখিয়াছেন।”

 কেশিনী বলিল, “মহাশয়, আপনাদের এই বার্ষ্ণেয় কি নলের কোন সংবাদ জানেন?

 বাহুক বলিল, “নলের সংবাদ কেবল নলই জানেন, আর কেহই জানে না। বার্ষ্ণেয় তাহার সন্তান দুটিকে এখানে রাখিয়া গিয়াছিল, সে কেবল এইমাত্র বলিতে পারে।”

 কেশিনী বলিল, “আচ্ছা, মহাশয়, আমাদেব দেশের একটি ব্রাহ্মণ আপনাদের রাজসভায় গিয়া না কি একবার বলিয়াছিলেন, ‘হে শঠ, বনের ভিতবে দুঃখিনীকে ফেলিয়া কোথায় গেলে! দুঃখিনী তোমার জনা কাঁদিতেছে। অন্য কেহ না কি এ কথায় কিছু বলে নাই, কিন্তু আপনি এ কথার উত্তর দিয়াছিলেন। আপনি সেই ব্রাহ্মণকে কি বলিয়াছিলেন, তাহা শুনিতে দময়ন্তীর বড় ইচ্ছা হইয়াছে!"

 এ কথায় বেচারা বাহুকের চোখ ছল ছল করিতে লাগিল। সে অতি কষ্টে মনের দুঃখ

উপেন্দ্র—৭১