পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৭২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 সুবচা বলিলেন, ‘আপনারা স্থির হউন! সাবিত্রীর পুণ্যের বলে সত্যবান্ অবশ্যই জীবিত আছে, ইহাতে সন্দেহ নাই।

 গৌতম বলিলেন, “আমি অনেক তপস্যা কবিয়াছি, লোকের মনের কথাও বলিয়া দিতে পারি, আমি নিশ্চয় বলিতেছি, সত্যবানের মৃত্যু হয় নাই।

 এ কথায় গৌতমের একজন শিষ্য বলিলেন, “আমার গুরুদেবের কথা কখনো মিথ্যা হয় না। সত্যবান্ অবশ্যই বাঁচিয়া আছে।

 দালভ্য কহিলেন, “তোমার চক্ষু যখন ভালো হইয়াছে, তখন সত্যবানও ভালো আছেন।

 মুনিদিগের কথায় দুমৎসেন অনেক সুস্থির হইযাছে, এমন সময় সাবিত্রী আর সত্যবান হাসিতে হাসিতে আশ্রমে ফিরিয়া আসিলেন। তাহাতে মুনিগণ আনন্দে কোলাহল করিতে করিতে দ্যুমৎসেনকে কত যে আশীর্বাদ করিলে তাহার সীমা নাই। তারপর সকলে সত্যবানকে জিজ্ঞাসা করিলেন, সত্যবান্ আজ তোমার ঘরে ফিরিতে এত বিলম্ব কেন হইল? তোমাদের জন্য তোমার পিতামাতা কত যে কষ্ট পাইয়াছেন, তাহা বলিয়া শেষ কবা যায় না।

 ইহাতে সত্যবান্ নিতান্ত দুঃখিত হইয়া বলিলেন, আমার কখনো ত এমন হয় না, কিন্তু আজ বড় মাথা ধরায়, বনের ভিতরে অনেকক্ষণ ঘুমাইয়াছিলাম।

 তখন গৌতম কহিলেন, ‘সত্যবান্, তোমার পিতার চক্ষু কি করিয়া ভালো হইল, তুমি তাহার কিছুই জান না, কিন্তু সাবিত্রী তাহার সমস্তই জানেন, তিনি যদি তাহা আমাদিগকে বলেন, তবে বড় সুখী হইব।

 গৌতমের কথায় সাবিত্রী সে রাত্রির আশ্চর্য ঘটনাসকলের কথা বলিলে মুনিরা যার পর নাই আহ্লাদিত হইয়া উচ্চৈঃস্বরে তাঁহার প্রশংসা করিতে করিতে নিজ নিজ আশ্রমে চলিয়া গেলেন।

 পরদিন সকালে দ্যুমৎসেন মুনিদিগের সহিত বসিয়া রাত্রির ঘটনার বিষয়ে কথাবার্তা বলিতেছে, এমন সময়ে শাল্বদেশ হইতে তাঁহার প্রজাগণ তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, মহারাজ! মন্ত্রী আপনার শত্রুকে বধ করিয়াছে, তাহার সৈন্যরা পলাইয়া গিয়াছে। আমরা সকলে মিলিয়া স্থির করিয়াছি যে, আপনার চক্ষু থাকুক বা না থাকুক, আপনিই আমাদের রাজা হইবেন। তাই আমরা রথ লইয়া আপনাকে লইতে আসিয়াছি, আপনি আপনার রাজ্যে চলুন।

 বলিতে বলিতেই তাহারা দেখিল যে, রাজা আর অন্ধ নহেন, তাঁহার দুই চক্ষু ভালো হইয়া গিয়াছে। ইহাতে তাহারা নিতান্ত আশ্চর্য এবং আনন্দিত হইয়া তাঁহার পায়ের ধূলা লইতে আরম্ভ করিল।

 তারপর দেশে গিয়া দ্যুমৎসেন রাজা আর সত্যবান্ যুবরাজ হইলেন। কালে সত্যবান ও সাবিত্রীর একশতটি পুত্র আর রাজা অশ্বপতিরও একশতটি পুত্র হইল।

 এমনি করিয়া সাবিত্রী পিতা, মাতা, শ্বশুর, শাশুড়ী এবং স্বামীর দুঃখ দূর করিয়াছিলেন। আর সেইজন্য এখনো আমাদের দেশের লোকে সাবিত্রীকে ভক্তি করে।