পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৮৩

 গুরু যখন পূর্বে এ কাজ করিয়াছেন, তখন ত আর উতঙ্কের তাহাতে কোন আপত্তিই থাকিতে পারে না। আর সেই লোকটির বিশাল দেহ দেখিয়া তাঁহারা একটু ভ্যাবাচেকাও লাগিয়া থাকিবে! কাজেই তিনি আর বিলম্ব না করিয়া জলযোগে বসিয়া গেলেন; সে কাজ শেষ হইলে তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুইয়া আবার পথ চলিতে লাগিলেন।

 পৌষ্যের রাজসভায় উপস্থিত হইয়া, উতঙ্ক তাঁহাকে আশীর্বাদ পূর্বক কুণ্ডল চাহিলে পৌষ্য বলিলেন, “আপনি রাণীর নিকটে গিয়া উহা চাহিয়া লউন।”

 এ কথায় উতঙ্ক বাড়ির ভিতরে গেলেন, কিন্তু সেখানে রাণীকে দেখিতে পাইলেন না। ইহাতে তিনি আশ্চর্য হইয়া রাজার নিকট আসিয়া বলিলেন, “মহারাজ আপনি বুঝি আমাকে ফাঁকি দিয়াছেন? আমি ত সেখানে রাণীকে দেখিতে পাইলাম না।”

 রাজা বলিলেন, “আমি আপনাকে ফাঁকি দিই নাই। আমার রাণী এমন ধার্মিক, আর তাঁহার মন এতই পবিত্র যে, অশুচি লোকে তাঁহাকে দেখিতে পায় না। আমার বোধহয় কোন কারণে আপনি অশুচি হইয়াছেন।”

 তখন উতঙ্কের মনে হইল যে, তাড়াতাড়ির ভিতরে, পথে জলযোগের পর আঁচানটা তেমন ভালো করিয়া হয় নাই। এই ভাবিয়া তিনি খুব ভালো মত আচমন করিয়া, অন্তঃপুরে যাওয়ামাত্র রাণীর দেখা পাইলেন।

 রাণী জানিতেন, উতঙ্ক খুব সাধু লোক আর দানের উপযুক্ত পাত্র। সুতরাং উতঙ্ক চাহিবামাত্র তিনি আহ্লাদের সহিত কুণ্ডল দুটি খুলিয়া তাঁহার হাতে দিলেন, আর বলিয়া দিলেন, “খুব সাবধান হইয়া কুণ্ডল লইয়া যাইবেন। তক্ষক নাগ এ কুণ্ডল পাইবার জন্য অনেক চেষ্টা করিয়াছিল। যাইবার সময় সে আপনার অনিষ্ট করিতে পারে।”

 উতঙ্ক বলিলেন, “কোন ভয় নাই। তক্ষক আমার কি করিবে?”

 এই বলিয়া তিনি সেখান হইতে যাত্রা করিলেন। অনেক দূরে পথচলার পর তিনি একটি সরোবরের ধারে উপস্থিত হইয়া, মনে মনে চিন্তা করিলেন যে, এখন বেলাও হইয়াছে। আর সরোবরের জলও অতি পরিষ্কার; সুতরাং এইখানে স্নান আহ্নিক করিয়া লই। তারপর তিনি কুণ্ডল দুটি সরোবরের ধারে রাখিয়া সবে জলে নামিয়াছেন এমন সময় কোথা হইতে এক ক্ষপণক (বৌদ্ধ সন্ন্যাসী) আসিয়া সেই কুণ্ডল লইয়া ছুট দিল।

 উতঙ্কও স্নান আহ্নিক শেষ করিয়া প্রাণপণে চোরের পিছু পিছু ছুটিলেন, তিনি ছুটিতেও পারিতেন যেমন তেমন নয়। সোজা পথে হইলে চোরকে ধরিয়া কুণ্ডল কাড়িয়া লইতে তাঁহার কোন কষ্টই হইত না। কিন্তু সে দুষ্ট চোর যখন দেখিল যে, আর ছুটিয়া কুলাইতে পারিতেছে না, তখন সে হঠাৎ একটা সাপ হইয়া গেল। তাহার সঙ্গে যখন সেখানে একটা গর্ত দেখা দিল, আর সাপটা তাহার ভিতরে ঢুকিয়া গেল, তখন আর উতঙ্কের বুঝিতে বাকি রহিল না যে, ঐ সাপই তক্ষক।

 এখন উপায় কি হইবে? তক্ষক পাতালে থাকে সে সেই গর্তের ভিতর দিয়া সেখানে চলিয়া গিয়াছে। গর্ত যদি বড় হইত, তবে উতঙ্ক নিজেও তাহার ভিতর দিয়া পাতালে যাইতে পারিতেন। কিন্তু উহা এতই সরু যে, তাঁহার লাঠিটাও ভালো করিয়া তাহার ভিতরে ঢোকে না। যাহা হউক, উতঙ্কের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। গর্তটাকে বড় করিবার জন্য তিনি তাঁহার লাঠিগাছ দিয়াই প্রাণপণে খোঁচাইতে লাগিলেন।