পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮৪
উপেন্দ্রকিশাের রচনাসমগ্র

 উতঙ্কের এইরূপ অবস্থা দেখিয়া ইন্দ্রের বড়ই দয়া হইল। তিনি তাঁহার বজ্রকে আদেশ করিলেন, “তুমি ঐ ব্রাহ্মণের লাঠির ভিতরে ঢুকিয়া তাহার সাহায্য কর।”

 বজ্র যে কখন গিয়া লাঠির ভিতরে ঢুকিয়াছে, উতঙ্ক তাহার কিছুই জানেন না। তিনি হঠাৎ একবার দেখিলেন যে, তাঁহার লাঠির এক খোঁচাতেই প্রকাণ্ড একটা গর্ত হইয়া গেল। সেই গর্তের ভিতরে ঢুকিয়া আর-এক খোঁচা মারিতেই, আরো অনেকখানি গর্ত হইয়া গেল। তারপর কি আর তিনি ছুটিয়া কুলাইতে পারেন? লাঠি সামনে ধরিয়া তিনি যতই ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটেন, গর্ত ততই যেন আপনা আপনিই বাড়িয়া যায়, এমনি করিয়া উতঙ্ক দেখিতে দেখিতে একেবারে পাতালে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সেখানকার শোভার কথা কি বলিব। এমন সুন্দর বাড়ি ঘর, মঠ মন্দির, আর ঘাট আমরা কেহ কখনো দেখি নাই।

 উতঙ্কের তখন শোভা দেখিবার অবসর ছিল না। তিনি কুণ্ডলের সন্ধানে ব্যস্ত হইয়া ছুটিয়া আসিয়াছিলেন, সুতরাং সেই কুণ্ডলটি ফিরাইয়া দিবার জন্য চিৎকার পূর্বক সর্পগণের স্তব করিতে লাগিলেন। কিন্তু সাপেরা কেহ তাঁহার কথায় কানই দিল না।

 ইহাতে নিতান্ত দুঃখিত হইয়া উতঙ্ক চারিদিকে তাকাইতেছেন, এমন সময় তিনি দেখিলেন যে, দুটি স্ত্রীলোক একটা তাঁতে কাপড় বুনিতেছে;সেই কাপড়ে সাদা সূতার টানা আর কালো সূতার প’ড়েন। একটা চাকায় বারটি খুঁটি,ছয়টি শিশু সেই চাকা ঘুরাইতেছে। তাহাদের নিকট সুন্দর একটি ঘোড়ার উপবে, একজন উজ্জল পুরুষ বসিয়া আছেন।

 ইঁহাদিগকে দেখিয়া উতঙ্কের বড়ই আশ্চর্য বোধ হওয়াতে, তিনি ইঁহাদের সকলেরই স্তব করিতে লাগিলেন। স্তব শুনিয়া সেই উজ্জল পুরুষ বলিলেন, তোমার স্তবে অতিশয় সন্তুষ্ট হইয়াছি তুমি কি চাহ?”

 উতঙ্ক অমনি হাত জোড় করিয়া বলিলেন, “মহাশয়, যদি দয়া করিয়া সাপ গুলিকে আমার বশ করিয়া দিতে পারেন, তবে আমার বড় উপকার হয়।”

 উজ্জল পুরুষ বলিলেন, “আচ্ছা তুমি এই ঘোড়ার পিছনে দাঁড়াইয়া ক্রমাগত ইহার গায়ে ফুঁ দিতে থাক।”

 এ কথায় উতঙ্ক সেই ঘোড়ার পিছন হইতে প্রাণপণে ফুঁ দিতে আরম্ভ করিলে, তাহার শরীর হইতে রাশি রাশি ধোঁয়া, আর নাক, কান, চোখ এবং মুখ দিয়া হুস্ হুস্ শব্দে ভয়ঙ্কর আগুন বাহির হইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে সেই ঝাঁঝাল ধোঁয়া সাপদের নাক চোখ মুখের ভিতর ঝুঁকিয়া, তাহাদিগকে হাঁচাইয়া, কাঁদাইয়া, আর কাশাইয়া, তাহাদের দুর্দশার এক শেষ করিল। তখন আর তাহারা ঘরের ভিতরে টিকিতে না পারিয়া, যেই হাঁপাইতে হাঁপাইতে বাহিরে আসিয়াছে অমনি সেই ভয়ঙ্কর আগুন তাহাদিগকে পোড়াইতে লাগিল।

 তখন তক্ষক প্রাণের ভয়ে জড়সড় হইয়া তাড়াতাড়ি কুণ্ডল হাতে উতঙ্কের নিকট আসিয়া কাশিতে কাশিতে বলিল, “ঠাকুর, এই নিন আপনার কুণ্ডল।”

 উতঙ্ক কুণ্ডল পাইয়া যার পর নাই আনন্দিত হইলেন, কিন্তু তাঁহার সে আনন্দ অধিকক্ষণ রহিল না;কারণ তিনি তখনই হিসাব করিয়া দেখিলেন যে, সেইদিনই তাঁহার উপধ্যায়ানীর ব্রত আরম্ভ হইবে, সুতরাং সময় থাকিতে সেখানে পৌঁছান একেবারেই অসম্ভব।

 উতঙ্কের ভাবনা কথা জানিতে পারিয়া সেই উজ্জ্বল পুরুষ বলিলেন, “উতঙ্ক, তোমার কোন চিন্তা নাই, আমার এই ঘোড়ায় চড়িয়া তুমি এই মুহুর্তেই তোমাব গুরুর বাড়িতে