পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৬০১

 রুমন, সুষেণ, বসু, বিশ্বাবসু ইহাদের কেহই এমন অস্বাভাবিক নিষ্ঠুর কাজ কাজ করিতে সম্মত হইলেন না, কিন্তু পরশুরাম পিতার আজ্ঞা মাত্র কুড়াল দিয়া তাঁহার মায়ের মাথা কাটিয়া ফেলিলেন। জমদগ্নি তখন ক্রোধ ভরে সাপ দিয়া রুমন, সুষেণ, বসু, এবং বিশ্ববসুকে পশু করিয়া দিলেন। পরশুরামকে তিনি বলিলেন, “বৎস; আমার কথায় তুমি বড়ই কঠিন কাজ করিয়াছ, এখন তোমার যেমন ইচ্ছা বর প্রার্থনা কর।”

 এ কথায় পরশুরাম বলিলেন, “বাবা, যদি তুষ্ট হইয়া থাকেন, তবে মাকে বাঁচাইয়া দিন। আর দাদাদিগকে আবার ভাল করিয়া দিন।”

 জমদগ্নি বলিলেন, “আচ্ছ, তাহাই হউক, তুমি আর কি চাহ?”

 পরশুরাম বলিলেন, “আমি যে মাকে বধ করিয়াছিলাম, এ কথা যেন তাহার মনে না থাকে, আর ইহার জন্য যেন আমার পাপ না হয়।”

 জমদগ্নি বলিলেন, “আচ্ছা তাহাই হউক, তুমি আর কি চাহ?

 পরশুরাম বলিলেন, “আমি যেন অমর হই, আর পৃথিবীতে যত বীর আছে, সকলের চেয়ে বড় হই।”

 জমদগ্নি বলিলেন, “আচ্ছা তাহাই হইবে।”

 ইহার পর একদিন জমদগ্নির পুত্রগণ আশ্রম হইতে বাহির হইয়া গিয়াছে; এমন সময় হৈহয়ের রাজা কার্তবীর্য সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। এই কার্তবীর্য বড়ই ভয়ঙ্কর লোক ছিলেন। ইহার আসল নাম অর্জুন, পিতার নাম কৃতবীর্য। এই জন্যই লোকে ইহাকে কার্তবীর্যাজুন অথবা শুধু কার্তবীর্য বলিয়া ডাকিত। সাধারণ মানুষের দুটি বই হতে থাকে। শুধু ইহার ছিল একহাজারটি। এই একহাজার হাতে একহাজার অস্ত্র লইয়া ইনি যখন যুদ্ধ করিতেন, তখন ইহার সামনে টিকিয়া থাকা কিরূপ কঠিন হইত, বুঝিতেই পার। তাহাতে আবার “দত্তাত্রেয়ের” বরে তিনি এমন একখানি রথ পাইয়াছিলেন যে, তাহাকে জল, স্থল, আকাশ, পাতাল, যেখান দিয়া বলা যাইত, সেখান দিয়াই সে গড় গড় করিয়া চলিত! এমন লোক যদি দুষ্ট হয়, তবে তাহাকে সকলেই ভয় করে। তাই দেবতারা অবধি কার্তবীর্যকে দেখিলে দূর হইতে পলায়ন করিতেন।

 এহেন অদ্ভুত লোক আশ্রমে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন। অথচ কেবল জমদগ্নি আর রেণুকা ভিন্ন তাহার সমাদর করিবার কেহই নাই। রেণুকা নিতান্ত ব্যস্ত হইয়া তাঁহার যথাশক্তি রাজাকে বিশ্রাম করিতে বলিয়া কুশল মঙ্গল জিজ্ঞাসা প্রভৃতি করিলেন বটে, কিন্তু তাহার সে আদর রাজা গ্রাহ্যই করিলেন না। তাহার বদলে তিনি আশ্রমের গাছপালা ভাঙ্গিয়া বলপূর্বক মহর্ষির হোমধেনুর (হোমের গরুর) বাছুরটিকে লইয়া প্রস্থান করিলেন।

 পরশুরাম আশ্রমে ফিরিয়া মহর্ষির মুখে এ কথা শুনিবামাত্র রাগে তাহার দুই চক্ষু লাল হইয়া উঠিল! তিনি আর-এক মুহূর্তও বিলম্ব না করিয়া ধনুর্বাণ, এবং তাহার সেই সাংঘাতিক কুঠার হস্তে কার্তবীর্যের সস্থানে ছুটিয়া চলিলেন। দুইজনে দেখা হইলে তাহাদের যে যুদ্ধ হইয়াছিল, সে বড়ই ভয়ঙ্কর ব্যাপার। কিন্তু কার্তবীর্য তাহার একহাজার হাত এবং একহাজার অস্ত্র লইয়াও পরশুরামকে কিছুতেই আঁটিতে পারলেন না। পরশুরামের পরশু, দেখিতে দেখিতে তাহার সেই একহাজার হাত সুদ্ধ তাহাকে কাটিয়া খণ্ড খণ্ড করিল।

 কার্তবীর্যের মৃত্যু সংবাদ শুনিয়া তাঁহার পুত্রগণের যে ভয়ানক রাগ হইবে, ইহা আশ্চর্য

উপেন্দ্র-৭৬