পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৬২১

বিদ্যা অধিক না থাকায় তাঁহারা তেমন সম্মান পাইতেন না। ইহাতে যবক্রীতের মনে বড়ই ক্লেশ হইত।

 যবক্রীত যখন দেখিলেন যে, পণ্ডিত হইতে না পারিলে সমাজে মান লাভ করা যায় না, তখন তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিলেন যে, ‘আমি তপস্যা দ্বারা অতি অল্পকালের ভিতরেই অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইব।’

 এই মনে করিয়া যবক্রীত গঙ্গাতীরে গমন পূর্বক, চারিদিকে আগুন জ্বালিয়া, আহার নিদ্রা পরিত্যাগ করতঃ ঘোরতর তপস্যা আরম্ভ করিলেন। সেই উৎকট তপস্যার তেজ ইন্দ্রের এতই অসহ্য হইয়া উঠিল যে, তিনি আর যবক্রীতের নিকট না আসিয়া থাকিতে পারিলেন না।

 ইন্দ্র যবক্রীতের নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে মুনিপুত্র, তুমি কিজন্য এরূপ কঠোর তপস্যা করিতেছ?”

 যবক্রীত বলিলেন, “ভগবন, আমি বিদ্যালাভের জন্য তপস্যা করিতেছি। গুরুর নিকট শিক্ষা করিয়া বিদ্বান হইতে অনেক সময় লাগে, আমি তপস্যা করিয়া অল্প কালের মধ্যে এরূপ জ্ঞান লাভ করিতে চাহি যে, অন্য কোন ব্রাহ্মণের তাহা নাই!”

 ইন্দ্র বলিলেন, “ব্রাহ্মণ কুমার, বিদ্যালাভের উপায় ত এরূপ নহে, গুরুর নিকট গিয়া যত্ন পূর্বক বিদ্যা লাভ কর। তপস্যায় দেহ ক্ষয় করিলে তোমার বিদ্যালাভ হইবে না।

 এই বলিয়া ইন্দ্র চলিয়া গেলেন, আর যবক্রীত আরো অধিক আগুন জ্বালিয়া, পূর্বাপেক্ষাও ঘোরতর তপস্যা আরম্ভ করিলেন।

 ইন্দ্র দেখিলেন, ঋষিকুমার সহজে ছাড়িবার পাত্র নহে। তখন তিনি অতিশয় জীর্ণ শীর্ণ যক্ষায় কাতর এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশ ধরিয়া কাশিতে কাশিতে পুনরায় যবক্রীতের তপস্যার স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

 যবক্রীত দেখিলেন যে, কোথা হইতে এক ব্রাহ্মণ আসিয়া, ক্রমাগত কেবল মুষ্টি মুষ্টি বালি আনিয়া গঙ্গায় ফেলিতে আরম্ভ করিয়াছে। ইহাতে তিনি আশ্চর্য হইয়া ভবিলেন, ‘বুড়া করে কি!’ তারপর হাসিতে হাসিতে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহাশয়, ও কি করিতেছেন?”

 বুড়া বামুন বলিলেন, “গঙ্গা পার হইতে লোকের ভারি কষ্ট হয়, তাই আমি সেতু বাঁধিতেছি। এই সুন্দর সেতুর উপর দিয়া সকলে অনায়াসে গঙ্গা পার হইবে!”

 যবক্রীত হাসিয়া বলিলেন, “হঃ! হাঃ! হাঃ! তাহাও নাকি কখনো হয়! মুঠো মুঠো বালি ফেলিয়া আপনি ভবিতেছেন, গঙ্গায় সেতু বাঁধিবেন! এ বিড়ম্বনা কেন? তাহার চেয়ে, যাহা হইতে পারে, এমন কোন একটা কাজ করুন।”

 ব্রাহ্মণ বলিলেন, “কেন বাপু! তুমি যদি তপস্যা করিয়া মস্ত পণ্ডিত হইতে পার, তবে আমিই বা কেন বালি দিয়া গঙ্গায় সেতু বাঁধিতে না পারিব?”

 যবক্রীত বুঝিলেন, এই কেশো বামুন আর কেহই নহে, স্বয়ং ইন্দ্র। সুতরাং, তিনি বলিলেন, “দেবরাজ, আমার এই তপস্যা আপনার ঐ বালির বাঁধের মত, ইহাই যদি আপনার অভিপ্রায়, তবে আপনার যাহা সাধ্য হয় করুন। আমি ইহার পর আমার হাত পা গুলির এক-একখানি আগুনে ফেলিয়া আর-একটি ভাল মতে তপস্যা করিব।”

 ইন্দ্র ভবিলেন, ‘কি বিপদ। এত দেখিতেছি বড়ই ভয়ানক লোক, নিজের মতলব আদায়