পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৩৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তাই সে ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি ভাগ্নে, এত গম্ভীর দেখিতেছি যে, কি ভাবিতেছ?”

 শিয়াল বলিল, “আর মামা, সে কথা বলিয়া কাজ কি? আমার মন বড্ড খারাপ হইয়া গিয়াছে। তুমি ত গেলে স্নান করিতে। তখন ইঁদুর হতভাগা বলে কিনা যে, সে নিজেই হরিণ মারিয়াছে তুমি নাকি কিছুই করিতে পার নাই। আর মামা, তোমার নিন্দাটা যে সে করিল, সে আর কি বলিব? এরপর আমার আর এই হরিণ খাইতে ইচ্ছা হইতেছে না।”

 এ কথায় বাঘ গর্জন করিয়া বলিল, “বটে? তবে কাজ নাই ভাগ্নে ও হরিণ খাইয়া। আমি এখনই আরো অনেক জন্তু মারিয়া আনিতেছি তাহাই আমরা খাইব।”

 এই বলিয়া বাঘ সেখান হইতে চলিয়া গেল, তারপর আসিল ইঁদুর। ইঁদুরকে দেখিয়া শিয়াল খুব গম্ভীরভাবে বলিল, “তাই ত, ভাই একটা কথা যখন হইয়াছে, তখন তোমাকে তাহা না বলা কি ভাল হয়? এইমাত্র বৃক তোমাকে খুঁজিতে গেল। সে বলিয়াছে তাহার নাকি হরিণ খাইতে একটুও ভাল লাগে না, আজ সে ইদুর খাইবে!”

 যেই এই কথা শুনা, অমনি, “মাগো! আমার কাজ নাই হরিণ খাইয়া! বলিয়া ইদুর দুই লাফে গর্তের ভিতরে ঢুকিয়া পড়িল!”

 ইদুর গর্তে ঢুকিবার একটু পরেই শিয়াল দেখিল, ঐ বৃক আসিতেছে। অমনি সে যার পর নাই ব্যস্ত হইয়া তাহার নিকট গিয়া তাহার কানে কানে বলিল, “ভাই! বড়ই ত মুস্কিল দেখিতেছি। তুমি বাঘকে কি বলিয়াছ? সে দেখিতেছি তোমার উপর চটিয়া একেবারে আগুন। আমি কি তাহাকে থামাইয়া রাখিতে পারি? সে পারিলে যেন আমাকেই ধরিয়া খায়। সে এই মাত্র তোমার খুঁজিতে গেল। এখনই আবার আসিবে।”

 তাহা শুনিয়া বৃক বলিল, “সর্বনাশ! তবে আমি এই বেলা পলাই! বাঁচিয়া থাকিলে অনেক হরিণ খাইতে পারিব।” তারপর আর সে সেখানে একটুও দেরি করিল না।

 বৃক যাইবামাত্র, শিয়াল তাড়াতাড়ি উঠিয়া সেখানকার মাটিতে বড় বড় আঁচড় কাটিতে লাগিল। তারপর খানিক ধূলায় গড়াগড়ি দিয়া, আর মুখের দুই পাশে অনেক থুথু আর হরিণের রক্ত মাখাইয়া, বিকট ভেংচি মারিয়া বসিয়া রহিল।

 নেউল স্নান করিয়া আইয়া দেখে, একি বিষম কাণ্ড! শিয়াল তাহার দিকে খালি আড় চোখে চায়, আর কোন কথা জিজ্ঞাসা করিলেই দাঁত খিচাইতে থাকে। শেষে সে অনেক মিনতি করিয়া বলিল, “কি হইয়াছে ভাই, বল না?”

 এ কথায় শিয়াল দুই চোখ ঘুরাইয়া বলিল, “বাঘ পলাইল, বৃক পলাইল, এখন নেউল বলে কিনা, কি হইয়াছে?’ হইবে আর কি? ওরা সকলেই আমার কাছে যুদ্ধে হারিয়া পলাইয়াছে। এখন খালি তুমিই বাকি, আইস একবার যুদ্ধ করি।”

 এই বলিয়া শিয়াল আরো বেশি করিয়া দাঁত খিচাইতে লাগিল। তাহা দেখিয়া নেউল বলিল, “ভাই, তোমার অত পরিশ্রম করিতে হইবে না, আমি বিনা যুদ্ধেই হার মানিতেছি।”

 তারপর তাড়াতাড়ি সেখান হইতে চলিয়া গেল। আর শিয়াল খানিক খুব হাসিয়া লইয়া হরিণ খাইতে বসিল।