পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৬৪১

রহিল না। সে বুক ফুলাইয়া আশ্রমের সম্মুখে গিয়া দাঁড়াইল। তাহা দেখিয়া বনের দ্বীপী অপ্রস্তুত হইয়া চলিয়া গেল।

 সেই কুকুর এখন হইয়াছে দ্বীপী। এখন আর সে দ্বীপী দেখিলে ভয় পায় না, আর কুকুর দেখিলেই সে তাড়িয়া খাইতে যায়। এমনি করিয়া কয়েকদিন গেল। তারপর একদিন এক প্রকাণ্ড বাঘ আসিয়া সেই আশ্রমে উপস্থিত হইল। সে ভয়ঙ্কর বাঘের হাঁড়িপানা মুখ, ধারাল দাঁত আর এই বড় হাঁ দেখিয়া, মহর্ষির দ্বীপী ভাবিল, এইবার বুঝি প্রাণটা যায়!’ তখন মুনি তাহাকে বলিলেন, ‘ভয় নাই, তোকে এখনি বড় বাঘ করিয়া দিতেছি।”

 সেই মুহূর্তেই সেই দ্বীপী ভয়ঙ্কর বাঘ হইয়া গেল, বুনো বাঘ আর তখন তাহার কি করিবে? ইহার পর হইতে সে অন্য বাঘের মতন বনে শিকার ধরিয়া খায়, আর খুব উৎসাহের সহিত মহর্ষির আশ্রমে পাহারা দেয়।

 একদিন সে খাওয়া দাওয়ার পর আশ্রমে শুইয়া আছে, এমন সময় দেখিল যে, কালোমেঘের মত অতি বিশাল এক পাগলা হাতি থামের মত দুই দাঁত বাগাইয়া তাহাকে মারিতে আসিতেছে। সে হাতির গর্জন মেঘের ডাকের চেয়েও ভয়ানক। তাহা দেখিয়া মহর্ষির বাঘ নিতান্ত জড়সড় ভাবে মহর্ষির পিছনে লুকাইতে গেলে, তিনি বলিলেন, ‘হতি দেখিয়া ভয় পাইয়াছিস? আচ্ছা, আমি তোকে হাতি করিয়া দিতেছি।

 এ কথা শেষ হইতে না হইতেই মহর্ষির বাঘ, সেই ভয়ঙ্কর হাতির চেয়েও ভয়ানক পর্বতাকার এক হাতি হইয়া গেল। তাহার চেহারা দেখিয়া, বুনো হাতি আর এক মুহূর্তও সেখানে রহিল না।

 ইহার পর অনেকদিন কাটিয়া গেল। মহর্ষির হাতি বনের গাছপালা খায়, আর আশ্রমে পাহারা দেয়। একদিন একটা সিংহ সেই আশ্রমে আসিয়া দেখা দিল।

 হাতি যতই বড় হউক, সিংহ দেখিলেই ভয়ে তাহার প্রাণ উড়িয়া যায়। মহর্ষি যখন দেখিলেন যে, তাঁহার হাতিটি সিংহের ভয়ে নিতান্তই অস্থির হইয়াছে, তখন কাজেই তাহাকেও তিনি সিংহ না করিয়া আর থাকিতে পারিলেন না। এমনি করিয়া সেদিনকার বিপদ কাটিয়া গেল।

 ছিল কুকুর, মুনির দয়ায় হইল দ্বীপী। তারপর সেই দ্বীপী হইল বাঘ, বাঘ হইল হাতি, হতি হইল সিংহ, সিংহ হইলে ত সে তাবৎ পশুর রাজা হইল, তখন আর তাহার কিসের ভয়? তখন সে মনের আনন্দে সেই বনে সর্দারি করিয়া বেড়াইত, অন্য পশুরা তাহাকে দেখিলে ভয়ে পলাইয়া যাইত।

 যাহা হউক, সিংহের চেয়েও ভয়ানক একটা অতি অদ্ভুত আর নিতান্ত উৎকট আট পেয়ে জন্তু আছে, তাহার নাম শরভ। সে সিংহ দেখিলেই তাহাকে ধরিয়া খায়। এমন ভয়ঙ্কর জন্তু আর এই ত্রিভুবনে নাই। মহর্ষির সিংহ যখন বনের ভিতরে খুবই রাজত্ব করিতেছিল, তখন একদিন সেই শরভ একটা আসিয়া তাহাকে খাইবার জন্য তাড়া করিল। আর একটু হইলেই সে তাহাকে খাইয়া শেষ করিত। কিন্তু মহর্ষি তাঁহার সিংহটাকে তাড়াতাড়ি শরভ করিয়া দেওয়াতে, আর তাহা করিতে পারিল না। তারপর মহর্ষির শরভ কিছুদিন সেই বনের ভিতরে খুবই ধুমধাম করিয়া বেড়াইত, আর অতি অল্পদিনের ভিতরেই বনের সকল জন্তু খাইয়া শেষ করিল। যে দু-একটা জন্তু তাহার হাতে মারা পড়ে নাই, তাহারা পলাইয়া প্রাণউপেন্দ্র—৮১