পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এই মনে করিয়া সে বিড়ালের নিকট গিয়া বলিল, “কেমন আছ ভাই? একটা কথা শুনিবে? দেখ, এখন তোমারও নিতান্ত বিপদ; আমারও নিতান্ত বিপদ; কিন্তু তোমাতে আমাতে বন্ধুতা হইলে দুজনেরই বিপদ সহজে কাটিতে পারে।”

 বিড়াল আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কেমন করিয়া?”

 ইঁদুর বলিল, “দেখ, ঐ দুষ্ট নেউল আর প্যাঁচা আমাকে ধরিয়া খাইবার জন্য কেমন ব্যস্ত হইয়াছে। উহাদিগের পানে তাকাইলে আর আমার এক মুহূর্তের তরেও প্রাণের আশা থাকে না। এখন তুমি যদি আমাকে হিংসা না কর, তবেই তোমার কোলের কাছে বসিয়া আমি উহাদের হাত হইতে বাঁচিতে পারি। তারপর আমি তোমার বাঁধন কাটিয়া দিলে, তুমিও নিশ্চিন্তে ঘরে চলিয়া যাইতে পার।”

 বিড়াল দেখিল, বাস্তবিকই ইঁদুররের কথা মত কাজ করা ভিন্ন তাহাদের রক্ষা পাওয়ার আর উপায় নাই। সুতরাং সে আনন্দের সহিত তাহার প্রস্তাবে সম্মত হইল। তখন সেই ইঁদুরের মনে কি আনন্দ যে হইল, তাহা কি বলিব? বিড়ালের নিজের ছানাও বোধহয় তাহার কোলে এমন আরামের সহিত গিয়া লুকাইতে পারিত না, যেমন সেই ইঁদুর গিয়া লুকাইল!

 এই আশ্চর্য ব্যাপার দেখিয়া নেউল আর প্যাঁচা কি করিবে, কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিল না। তাহারা খানিক বোকার মত ফ্যাল ফ্যাল করিয়া তাকাইয়া, চোরের মত সেখান হইতে পলাইয়া গেল।

 তারপর ইঁদুর বিড়ালকে অনেক ধন্যবাদ দিয়া, ধীরে সুস্থে তাহার বাঁধন কাটিতে আরম্ভ করিল। বিড়াল বলিল, “ভাই। একটু চটপট কর, আমার বড় লাগিতেছে।”

 ইঁদুর বলিল, “ভাই, তুমি ব্যস্ত হইও না। আমি ঠিক সময়ে নিশ্চয় বাঁধন কাটিয়া শেষ করিব।”

 বিড়াল বলিল, “আর কখন শেষ করিবে? আর-একটু পরে ত ব্যাধই আসিয়া উপস্থিত হইবে।

 ইঁদুর বলিল, “ব্যাধ যাহাতে তোমার কোন অনিষ্ট না করিতে পারে, তাহার জন্য আমি দায়ী। কিন্তু ভাই, এখন তোমার সকল বাঁধন খুলিয়া দিলে, যদি তুমি এখনই আমাকে ভক্ষণ করিয়া ফেলিতে চাহ, তবে আমার কি দশা হইবে? তোমার কোন চিন্তা নাই। আমি সকল দড়ি কাটিয়াছি এক গাছি মাত্র বাকি আছে তাহাও আমি ঠিক সময়ে কাটিয়া দিব। ব্যাধ তোমার কিছুই করিতে পারিবে না।”

 এমনি করিয়া ক্রমে রাত্রি শেষ হইয়া আসিল;তাহার খানিক পরেই ব্যাধও আসিয়া দেখা দিল। তাহা দেখিয়া বিড়াল বলিল, “সর্বনাশ! ভাই, এখন উপায়?”

 ইঁদুর বলিল, “কোন চিন্তা নাই!”

 এই বলিয়া সে কুট করিয়া বিড়ালের শেষ বাঁধনটি কাটিয়া দিবামাত্র বিড়াল যার পর নাই ব্যস্ত হইয়া দুই লাফে গাছে উপরে গিয়া উঠিল। ইঁদুরও সেই অবসরে তাহার গর্তে গিয়া ঢুকিল। ব্যাধ আসিয়া দেখিল, তাহার জালের বড়ই দুর্দশা হইয়াছে সুতরাং সে দুঃখের সহিত তাহা লইয়া ঘরে ফিরিল।

 বিড়াল যখন দেখিল, বিপদ কাটিয়া গিয়াছে তখন সে অতিশয় মিষ্টভাবে ইঁদুরকে ডাকিয়া বলিতে লাগিল “ভাই! তখন তুমি তাড়াতাড়ি চলিয়া গেলে, আর আমি তোমাতে