পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৬৪৯

 কাল প্রাতে যেখানে ইচ্ছা হয়, যাইবেন।”

 এই বলিয়া, গৌতমের জন্য লাল ফুলের অতি সুন্দর শয্যা প্রস্তুত করিয়া দিয়া, সে গঙ্গায় মাছ ধরিতে গেল। এবং অল্প কালের ভিতরেই নানারূপ সুমিষ্ট মাছ আনিয়া তাহাকে পরিতোষ পূর্বক আহার করাইল। আহারের পর সে গৌতমকে, নিজের ডানার বাতাসে শীতল করিয়া, অতি মধুর স্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি কে? আপনার কি নাম?”

 গৌতম বলিল, “আমি ব্রাহ্মণ, আমার নাম গৌতম।”

 বক বলিল, “আপনি কিজন্য এখানে আসিয়াছেন?”

 গৌতম বলিল, “পাখি, আমি নিতান্ত দীনহীন, ধন পাইবার আশায় সমুদ্রে চলিয়াছি।”

 বক বলিল, “সেজন্য আপনার কোন চিন্তা নাই, এখন আমার সহিত আপনার বন্ধুত্ব হইল; আপনি যাহাতে অনেক ধন পান, আমি তাহাব উপায় করিয়া দিব।”

 এ কথায় গৌতম অতিশয় আহ্লাদিত হইয়া সুখে নিদ্রা গেল। পরদিন প্রভাতে রাজধর্ম তাহাকে একটি পথ দেখাইয়া দিয়া বলিল, “এই পথে তিন যোজন গেলে আপনি আমার পরম বন্ধু রাক্ষসরাজ বিরূপাক্ষের দেখা পাইবেন। তাহার নিকট গেলে আর আপনার ধনের ভাবনা থাকিবে না।

 গৌতম সেই পথে চলিতে চলিতে, মেরুব্রজ নামক নগরে উপস্থিত হইল, উহাই রাক্ষসরাজ বিরূপাক্ষের রাজধানী। গৌতম সেখানে উপস্থিত হইবামাত্র, দরোয়ান বিরূপাক্ষের নিকট সংবাদ দিতে গেল, এবং খানিক পরেই ছুটিয়া আসিয়া বলিল, “আপনি শীঘ্র চলুন, রাজা আপনাকে দেখিবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছেন।”

 গৌতম মেকব্রজ নগরে পৌছিবার পূর্বেই রাজধর্ম বিরূপাক্ষকে তাহার সংবাদ দিয়াছিল। সুবাং সেখানে গিয়া তাহার সমাদরের কোন ত্রুটি হইল না। বিরূপাক্ষ অতিশয় ধীর এবং বুদ্ধিমান্ লোক ছিলেন, ধার্মিক বিদ্বান ব্রাহ্মণকে যেমন কথা জিজ্ঞাসা করিতে হয়, গৌতমকেও তিনি সেইরূপে, তপস্যার কথা, বেদাধ্যায়নের কথা, ব্রহ্মচর্যের কথা, এই-সব জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। গৌতম মূর্খ মানুষ, সে তাহার কি উত্তর দিবে? সে নিতান্ত লজ্জিত হইয়া কেবল বলিল, “আমি ব্রাহ্মণ!”

 তাহা শুনিয়া বিরূপাক্ষ আবার বলিলেন, “আপনার কোন ভয় নাই। আপনি যথার্থ বলুন, আপনার বাড়ি কোথায়, কোন বংশে জন্মিয়াছে, আর কোথায় বিবাহ করিয়াছে,?”

 গৌতম বলিল, “মহারাজ, আমার জন্মস্থান মধ্যদেশে, এখন আমি কিরাতগণের দেশে বাস করি, আর শুদ্রের কন্যা বিবাহ করিয়াছি।”

 বিরূপাক্ষ দেখিলেন, এ ব্রাহ্মণ নিতান্ত অধম, দানের উপযুক্ত পাত্র নহে। তথাপি তিনি মনে করিলেন যে, যা হোক, এ ব্যক্তি ব্রাহ্মণ ত বটে;আর আমার বন্ধু রাজধর্ম ইহাকে পাঠাইয়াছে। সুতরাং তিনি যাহাতে সন্তুষ্ট হন, তাহাই করিতে হইবে। আজ কার্তিকমাসের পূর্ণিমা, আজ আমি সহস্র ব্রাহ্মণকে সুবর্ণদান করিব। সেই উপলক্ষে ইহাকেও সন্তুষ্ট করিয়া দেওয়া যাইবে।

 ইহার একটু পরেই নানাদিকে হইতে মহামান্য দেবতুল্য ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ রাজসভায় উপস্থিত হইতে লাগিলেন। তাঁহারা সভা বসিলে সে স্থানের অতি অপরূপ শোভা হইল। রাজার কথায় গৌতমও নিতান্ত জড়সড় হইয়া তাঁহাদের এক পাশে গিয়া বসিল! রাজা তাঁহাদের প্রত্যেককে রাশি রাশি ধনরত্ন দান করিয়া, বিনয়ের সহিত বলিলেন, “ঠাকুর

উপেন্দ্র—৮২