পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তম্বুরা নামাইলেন। এতকাল যে চলিয়া গিয়াছে, রাজার কিন্তু সে খেয়ালই নাই। তিনি ভাবিতেছেন, ‘আহা, এমন সুন্দর গান মুহূর্তের মধ্যেই ফুরাইয়া গেল?’

 যাহা হউক, এখন নিজের কাজ সারিয়া লইতে হইবে আর বিলম্ব করা ভালো নহে। এই ভাবিয়া রাজা ব্রহ্মার সিংহাসনের সামনে গিয়া ভক্তিভরে প্রণামের পর জোড়হাতে বলিলেন, “ভগবন্‌! আমার এই কন্যাটির বিবাহ কাহার সঙ্গে দিব, দয়া করিয়া আমাকে বলিয়া দিন। আমি অনেক রাজপুত্রের সন্ধান লইয়াছি, কিন্তু ইহাদের কোনটি যে সকলের চেয়ে ভালো, তাহা স্থির করিতে পারিতেছি না।”

 ব্রহ্মা বলিলেন, “আচ্ছা, তুমি কাহার কাহার কথা ভাবিয়াছ, আমাকে বল দেখি।”

 সে কথায় রাজা অনেকের নাম করিয়া বলিলেন, “ইঁহাদের মধ্যে একটি হইলে আমি সুখী হইতাম।” তাহা শুনিয়া ব্রহ্মা হাসিয়া বলিলেন, “মহারাজ, তুমি যাহাদের নাম করিলে, এখন তো তাহাদের কেহই বাঁচিয়া নাই; তাহারা ছিল ত্রেতা যুগের লোক, আর এখন হইল দ্বাপরের শেষ। এতদিনে তাহাদের ছেলের ছেলে, নাতির নাতি অবধি মরিয়া গিয়াছে, তাহাদের রাজ্য, বংশ, নাম অবধি লোপ পাইয়াছে!”

 তোমরা হয়তো ভাবিতেছ যে, পৃথিবীর আর সব লোক মরিয়া গেল, আর শুধু রাজা আর তাঁহার মেয়েটি বাঁচিয়া রহিয়াছে, এ কেমন কথা হইল?

 কিন্তু সে যে ব্রহ্মার পুরী, সেখানে তো জরা মৃত্যুর অধিকার নাই। কাজেই তাঁহারা দুজন শুধু যে বাঁচিয়া আছেন তাহাই নহে, ঠিক যেমনটি গিয়াছিলেন তেমনি আছেন, একটুও বুড়া হন নাই!

 যাহা হউক, ব্রহ্মার কথায় রাজা নিতান্তই আশ্চর্য হইলেন আব ভয় পাইলেন, আর ব্যস্ত হইলেন তাহার চেয়েও বেশি।

 তিনি বিষম থতমত খাইয়া বলিলেন, “এ্যাঁ, এ্যাঁ! কি সর্বনাশ। তাই তো! প্রভু, এখন উপায়? এখন তবে আমার এই মেয়েটিকে কাহার হাতে দিই? আমার সমকক্ষ রাজা এখন কে কে আছেন?”

 ব্রহ্মা বলিলেন, “মহারাজ! এতদিনে কি আর তোমার সে রাজ্য আছে? তোমার রাজ্যও নাই, প্রজারাও নাই। তোমার সেই সুন্দর কুশস্থলী নগরটি অবধি নাই। তাহার জায়গায় এখন দ্বারকা নামক পুরী হইয়াছে। সেই দ্বারকার রাজা কৃষ্ণ, তাঁহার ভাই বলরাম। সেই বলরামের সঙ্গে গিয়া তোমার এই কন্যার বিবাহ দাও। এ মেয়েটি যেমন লক্ষ্মী, বলরামও তেমনি মহাশয় লোক, সকলরকমেই ইহার উপযুক্ত।”

 কাজেই রাজা তখন আর কি করেন? তিনি ব্রহ্মাকে প্রণাম করিয়া মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে পৃথিবীতে ফিরিয়া আসিলেন। আসিয়া দেখেন বাস্তবিকই তাঁহার রাজ্য, রাজধানী, লোকজন, আত্মীয়স্বজন সব লোপ পাইয়াছে। পৃথিবী আর সে পৃথিবীই নাই। তাঁহাদের সময়ে চৌদ্দ হাত লম্বা এক একটা মানুষ হইত, আর এখনকার লোকগুলি মোটে সাত হাত লম্বা আর তাহাদের চালচলনও যেন কেমন কেমন হইয়া গিয়াছে। যাহা হউক, আর দুঃখ করিয়া কি হইবে? রাজা বলরামকে খুজিয়া বাহির করিয়া, তাঁহার সহিত মেয়ের বিবাহ দিয়া বনবাসী হইলেন।

 এদিকে রেবতীকে পাইয়া বলরামের আর আনন্দের সীমাই নাই। কেবল একটি কথায়