পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৯৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 যে বস্তুর প্রতি এক জন্তুর লোভ হয়, অন্য জন্তুরও তাহার প্রতি লোভ হইতে পারে! সিংহ সেই মণি লইয়া বেশিদূর যাইতে না যাইতেই পর্বতের গুহার ভিতর হইতে এক বিশাল ভল্লুক আসিয়া তাহার ঘাড় ভাঙ্গিয়া মণিটি কাড়িয়া নিল।

 প্রসেন যখন আর ঘরে ফিরিলেন না, তখন তাঁহার আত্মীয়েরা মনে করিল যে নিশ্চয়ই কৃষ্ণ সেই মণির লোভে তাঁহাকে বধ করিয়াছে, নহিলে এমন কাজ আর কে করিবে? পুর্ব হইতেই কৃষ্ণের ঐ মণির প্রতি লোভ ছিল, তাঁহারই এই কাজ!

 বাস্তবিক এ বিষয়ে কৃষ্ণের কোনো অপরাধই ছিল না, কাজেই এই মিথ্যা অপবাদের কথা শুনিয়া, তিনি অতিশয় দুঃখিত হইলেন। আর প্রতিজ্ঞা করিলেন যে যেমন করিয়াই হউক, এই মণি আনিয়া দিতে হইবে।

 প্রসেন যখন শিকারে গিয়া প্রাণ হারাইয়াছিলেন, তখন সহজেই বুঝা যায় যে সেই শিকারের জায়গায় গিয়াই তাহাকে খুঁজিতে হইবে! কৃষ্ণ ও বলরাম কয়েকটি সাহসী, চতুর আর বিশ্বাসী লোক লইয়া চুপি চুপি সেই স্থানে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেখানে গিয়া প্রসেনের দেহ খুঁজিয়া বাহির করিতে তাহাদের অধিক বিলম্ব হইল না। প্রসেনেব ঘোড়াটিও সেইখানে মরিয়া পড়িয়াছিল। দুটি দেহের চারিধারে সিংহের পায়ের দাগ, সিংহের নখ, দাঁতে দেহ দুটি ক্ষতবিক্ষত!

 সেই সিংহের পদচিহ্ন ধরিয়া কিছুদূর গেলেই দেখা গেল যে উহার দেহও ক্ষতবিক্ষত হইয়া পড়িয়া আছে। তাহাকে যে ভল্লুকে মারিয়াছে পায়ের চিহ্ন দেখিয়া আর, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ রহিল না। এখন এই ভল্লুককে খুঁজিয়া বাহির করিতে পারিলেই হয়। তাহারা অতি সাবধানে সেই ভল্লুকের পায়ের দাগ দেখিয়া চলিতে লাগিলেন। সে দাগ ক্রমে একটা গুহার সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। সুতরাং বুঝা গেল, সেই গুহার ভিতরেই ভল্লুকের বাড়ি।

 এই কথার আরো প্রমাণ তখনই পাওয়া গেল। গুহার ভিতর হইতে একটি স্ত্রীলোকের গলার শব্দ আসিতেছে, একটি ছেলেরও কান্না শুনা যাইতেছে। স্ত্রীলোকটি ছেলেটিকে শান্ত করিবার জন্য বলিতেছে, “কাঁদিয়ো না বাছা! সিংহ প্রসেনকে মারিয়াছিল, তোমার পিতা সেই সিংহকে মারিয়া স্যমন্তক মণি আনিয়াছেন। এখন সেই মণি লইয়া তুমি খেলা করিবে, আর কাঁদিয়ো না।”

 কাজেই আর কিছু বুঝিতে বাকি রহিল না। তখন কৃষ্ণ, বলরাম আর সঙ্গের লোকদিগকে গুহার দরজায় রাখিয়া যেই একা ভিতরে প্রবেশ করিয়াছে, অমনি পর্বতপ্রমাণ এক বিশাল, বিকট ভল্লুক ভীষণ গর্জনে পাহাড় কাঁপাইয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিল। তখন যে তাঁহাদের কি ঘোরতর যুদ্ধ হইয়াছিল, তাহা আর বলিয়া শেষ করা যায় না। একদিন, দুদিন করিয়া সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলিয়া গেল, তথাপি সে যুদ্ধের বিরাম নাই।

 এদিকে কৃষ্ণের বিলম্ব দেখিয়া আর ভল্লুকের ভয়ংকর গর্জন শুনিয়া, বলরাম আর সঙ্গের লোকেরা দ্বারকায় আসিয়া সকলকে বলিয়াছেন যে কৃষ্ণ আর নাই, তাঁহাকে ভল্পকে খাইয়াছে।

 একুশ দিনের পর সেই যুদ্ধ শেষ হইল। একুশ দিন যুদ্ধ করিয়া ভল্লুক বুঝিতে পারিল যে কৃষ্ণের নিকট হার মানা ভিন্ন আর উপায় নাই। তখন সে অশেষ অনুনয়ের সহিত তাঁহার