পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৯৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তাহার সঙ্গে সঙ্গেই গর্তে গিয়া ঢুকিলেন বটে, কিন্তু সেখানকার সেই ঘোর অন্ধকারের ভিতরে আর তাহাকে দেখিতে পাইলেন না।

 রাজপুত্র সেই গর্তের পথে দানবকে খুঁজিতে খুঁজিতে একেবারে পাতালে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেখানে আর অন্ধকার নাই, সেখানে ইন্দ্রপুরীর ন্যায় অতি অপরূপ সোনার পুরী। রাজপুত্র তাহারা ভিতরে কতই খুঁজিলেন কিন্তু দানবকে পাইলেন না। মানুষও সেখানে কেহই ছিল না। ছিল কেবল দুটি মেয়ে। তাহার একটি যে কি সুন্দর, সে আর বুঝাইবার উপায়ই নাই।

 এই কন্যার নাম মদালসা, ইঁহার বৃত্তান্ত অতি আশ্চর্য। ইঁহার পিতার নাম বিশ্বাবসু, তিনি গন্ধর্বের রাজা। একদিন মদালসা তাঁহার পিতার বাগানে খেলা করিতেছিলেন, এমন সময় হঠাৎ চারদিক অন্ধকার হইয়া গেল। সে অন্ধকার আর কিছুই নহে, উহা পাতালকেতু নামক দুষ্ট দানবের মায়া। দুরাত্মা সেই অন্ধকারের ভিতর সেই অসহায় বালিকাকে লইয়া পলায়ন করিল, কেহ সে কথা জানিতে পারিল না। তাহার আর্তনাদও কেহ শুনিতে পাইল না।

 তদবধি সেই দুষ্ট তাঁহাকে পাতালে আনিয়া নিজ বাড়িতে আটকাইয়া রাখিয়াছে, বলিয়াছে যে, ভালো দিন পাইলেই তাঁহাকে বিবাহ করিবে।

 ইহার মধ্যে একদিন মদালসা মনের দুঃখে আত্মহত্যা করিতে যান, তখন সুরভি তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইয়া বলেন, “বাছা, তোমার কোনো ভয় নাই, এই দুষ্ট দানব তোমাকে বিবাহ করিতে পাইবে না! ইহার মৃত্যু যাঁহার হাতে হইবে, তিনিই অবিলম্বে তোমাকে বিবাহ করিবেন।”

 রাজপুত্র মদালসার সঙ্গের মেয়েটির নিকট এ সকল সংবাদ শুনিতে পাইলেন। মেয়েটির নাম কুণ্ডলা! তিনি একজন তপস্বিনী এবং মদালসার সখী। কুণ্ডলা আরো বলিলেন যে, সেদিন পাতালকেতু শূকর সাজিয়া মুনিদের আশ্রম নষ্ট করিতে গিয়াছিল, সেখান হইতে এইমাত্র এক রাজপুত্রের হাতে সাংঘাতিক বাণের খোঁচা খাইয়া আসিয়াছে।

 তখন আর ঋতধ্বজের বুঝিতে বাকি রহিল না যে তিনিই সেই রাজপুত্র, আর পাতালকেতুই তাহার সেই দানব।

 সে কথা শুনিয়া মেয়ে দুটির যে আনন্দ হইল!

 রাজপুত্রকে দেখিয়াই মদালসার যারপরনাই ভালো লাগিয়াছিল আর সেজন্য তাঁহার মনে দুঃখও হইয়াছিল যতদূর হইতে হয়। কেননা, ইঁহাকে তো আর পাওয়ার কোনো আশাই নাই, যেহেতু সুরভি বলিয়াছেন, ‘যে দানব মারিবে, সেই মদালসাকে বিবাহ করিবে তাঁহার কথা বৃথা হইবার নহে।

 যাহা হউক, এখন সে ভয় কাটিয়া গেল, সুতরাং দুঃখের জায়গায় আনন্দ হইল চতুর্গুণ! তবে আর বিলম্ব কেন? তখনই পুরোহিত তম্বুরু আসিয়া উপস্থিত হইলেন। দেখিতে দেখিতে পবিত্র আগুন জ্বলিল, ঘৃতের আহুতি পড়িল, মন্ত্রের ধ্বনি উঠিল, শুভকার্য শেষ হইল।

 তারপর কুণ্ডলা আবার তপস্যা করিতে গেলেন। রাজপুত্র মদালসা সহ সেই আশ্চর্য ঘোড়ায় চড়িয়া দেশে ফিরিবার আয়োজন করিলেন। অমনি পাতাল কাঁপাইয়া ভীষণ চিৎকার উঠিল, ‘নিয়া গেল রে, নিয়া গেল! শীঘ্র আয়, শীঘ্র আয় তোরা।’

 তাহার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার দানব কোথা হইতে খাঁড়া ঢাল গদা শূল হাতে আসিয়া