পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭১০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

গলায় দিয়ে, মণি-মাণিক্যের গহনা ঝল্‌মলিয়ে তাঁর কাছে এসে জোড়হাতে বললেন, ‘‘আমাদের কি সৌভাগ্য! প্রভু আজ আমাদের স্মরণ করেছেন। আজ্ঞা করুন, আমাদের কি করতে হবে।”

 শিব বললেন, ‘‘আমি হিমালয় পর্বতের মেয়ে পার্বতীকে বিয়ে করতে চাই; তোমরা তাঁর কাছে গিয়ে সব ঠিকঠাক কর। দেখো যেন ভালোমতে কাজটি করে আসতে পার।”

 সপ্তর্ষিরা তখন নিমেষের মধ্যে আকাশে উড়ে, সেই ঝক্‌ঝকে হিমালয় পর্বতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। হিমালয় দূরে থেকে তাঁদের দেখতে পেয়ে মেনকাকে বললেন, “না জানি ঐ সাতটি সূর্য কি করতে আমাদের এখানে আসছে!” বলতে বলতেই তিনি দেখলেন, ওসব সূর্য নয়, সাতটি মুনি। তখন তিনি তাড়াতাড়ি তাঁদের কাছে গিয়ে, জোড়হাতে তাঁদের নমস্কার করে বসতে সুন্দর আসন দিয়ে বললেন,“মুনি-ঠাকুরেরা কি মনে করে আমাদের এখানে পায়ের ধুলো দিয়েছেন?” মুনিরা বললেন, ‘‘শিব তোমার কন্যা পার্বতীকে বিয়ে করতে চেয়েছেন, তাই আমরা এসেছি। এমন জামাই আর পাবে না রাজা, শিবের কাছে তোমার পার্বতীর বিয়ে দাও।”

 তা শুনে হিমালয়ের আর আনন্দের সীমাই রইল না। তিনি তখনি ছুটে গিয়ে, পার্বতীকে সাজিয়ে গুজিয়ে এনে মুনিদের কোলে বসিয়ে দিয়ে বললেন, “এই নিন, আমার পার্বতীকে।” এমন সুন্দর লক্ষ্মী মেয়ে আর কখনো হয় নি, হবেও না। পার্বতীকে দেখে স্নেহে মুনিদের মন গলে গেল। তাঁরা তাঁর গায়ে হাত বুলিয়ে, তাঁকে কত আশীর্বাদ করে, বিয়ের সব কথাবার্তা বলে সেখান থেকে পরম আনন্দে হাসতে হাসতে চলে এলেন। স্থির হল যে আর তিনদিন পরেই শিবের সঙ্গে পার্বতীর বিয়ে হবে।

 সপ্তর্ষিরা শিবের কাছে এসে এসব কথা জানালে শিব যারপরনাই খুশি হয়ে বললেন, “বেশ বেশ! বিয়ের সময় তোমরা আমার পুরুত হবে কিন্তু। তোমাদের শিষ্যদেরও নিয়ে আসবে।”

 মুনিরা সে কথায় ‘যে আজ্ঞা’ বলে চলে যেতেই শিব বিয়ের আয়োজন করবার জন্য তাঁর ভূত প্রেত নিয়ে কৈলাস পর্বতে চলে এলেন। তারপর তিনি নারদকে ডেকে বললেন, “নারদ, বিয়ের ঠিক করেছি; কনে হচ্ছেন হিমালয়ের মেয়ে পার্বতী। এখন তুমি একটি কাজ কর তো; দেবতাদের সকলকে নিমন্ত্রণ করে এস। মুনি-ঋষিদেরও বলবে; যক্ষ-গন্ধর্বেরাও যেন বাদ না পড়ে। সকলকেই আসতে হবে; যে না আসবে তার সঙ্গে আমার ছাড়াছড়ি হবে।”

 নারদ মুনি যেমন তেমন চালাক লোক ছিলেন না, শিবের হুকুমমতো সব কাজ করে ফেললেন।

 ততক্ষণে কৈলাস-পর্বতে খুবই ধুমধাম পড়ে গেছে; ভূতেরা ঢাক, ঢোল, শিঙ্গা, সানাই, কাঁসর, করতাল সব বাজিয়ে সৃষ্টি মাথায় করে তুলেছে। তাদের মুখে আজ আর হাসি ধরে না। ক্রমে দেবতারাও একজন দুজন করে এসে উপস্থিত হলেন। হাঁসে চড়ে ব্রহ্মা এলেন, গরুড়ে চড়ে বিষ্ণু এলেন। ইন্দ্র, যম, কুবের, বরুণ, কেউ আসতে বাকি রইলেন না। গন্ধর্ব আর অপ্সরারা তো এর ঢের আগেই এসে গান বাজনা জুড়ে দিয়েছে। শিবও সেই কখন থেকে সেজেগুজে প্রস্তুত হয়ে আছেন। বরের বেশে তাঁকে কি সুন্দরই দেখাচ্ছে।

 তারপর সকলে শিবকে নিয়ে রওনা হলেন। দেবতারা নিজ নিজ দল নিয়ে বরের আগে