পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭১৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

“হয় যুদ্ধ কর না হয় হার মান।”

 উষীরবীজ নামে একটা জায়গায় মরুত্ত নামে এক রাজা যজ্ঞ করিতেছেন, রাবণ পুষ্পক রথে চড়িয়া হেঁইয়ো হেঁইয়ো শব্দে সেখানে আসিয়া উপস্থিত। যজ্ঞের স্থানে দেবতাদের অনেকেই ছিলেন, রাবণকে দেখিয়াই ভয়ে তাঁহাদের মুখ শুকাইয়া গেল। ছুটিয়া যে পলাইবেন, এতটুকুও তাহাদের ভরসা হইল না; কি জানি পাছে ধরিয়া ফেলে। তাই তাহারা সেইখানেই নানা জন্তুর বেশ ধরিয়া লুকাইয়া রহিলেন। ইন্দ্র হইলেন ময়ূর, ধর্ম হইলেন কাক, কুবের হইলেন গিরগিটি, বরুণ হইলেন হাঁস।

 এদিকে মরুত্তের সঙ্গে রাবণের খুবই যুদ্ধ বাধিবার জোগাড় দেখা যাইতেছে, গালাগালি আরম্ভ হইয়াছে মারামারিরও বিলম্ব নাই, এমন সময় মরুত্তের গুরু সম্বর্ত মুনি তাঁহাকে বলিলেন, “মহারাজ! যুদ্ধ করিয়া কাজ নাই কেননা তাহা হইলে তোমার যজ্ঞ নষ্ট হইয়া যাইবে, তাহাতে সর্বনাশ হইবে।” কাজেই মরুত্ত চুপ করিয়া গেলেন, আর রাবণ “জিতিয়াছি জিতিয়াছি” বলিয়া খুবই বাহাদুরী করিতে লাগিল। তারপর সেখানে যত মুনি উপস্থিত ছিলেন, তাহাদের সকলকে খাইয়া যারপরনাই খুশি হইয়া সে সেখান হইতে চলিয়া গেল।

 তখন দেবতামহাশয়েরা আবার যার যার বেশ ধরিয়া মনে করিলেন, “বাবা, বড্ড বাঁচিয়া গিয়াছি।” যে সকল জন্তুর সাজ তাঁহারা নিয়াছিলেন, তাহাদের উপরে অবশ্য তাঁহারা খুবই খুশি হইলেন, আর তাহাদিগকে বর দিতে লাগিলেন।

 ইন্দ্র ময়ূরকে বলিলেন, “তোমার সাপের ভয় থাকিবে না, আর আমার যেমন হাজার চোখ, তোমার লেজেও তেমনি হাজার চোখ হইবে।” ময়ূরের লেজে আগে শুধুই নীলবর্ণ ছিল, তখন হইতে তাহাতে চমৎকার চক্র দেখা দিল।

 ধর্ম কাককে বলিলেন, “তোমার আর কোনো অসুখ হইবে না। মরণের ভয়ও তোমার দূর হইল; কেবল মানুষে যদি মারে তবেই তোমার মৃত্যু হইবে।”

 বরুণ হাঁসকে বলিলেন, “তোমার গায়ের রঙ ধব্‌ধবে সাদা হইবে। তখন হইতে হাঁস সাদা হইয়াছে, আগে তাহার আগাগোড়া সাদা ছিল না, পাখার আগা নীল, আর কোলের দিকে ছেয়ে রঙের ছিল।

 কুবের গিরগিটিকে বলিলেন, “তোমার মাথা সোনার মতো হইবে।” সেই হইতে গিরগিটির মাথায় সোনালি রঙ।

 এদিকে রাবণের আর গর্বের সীমাই নাই। দুষ্মন্ত, সুরথ, গাধি, গয়, পুরুরবা প্রভৃতি বড় বড় রাজারা তাহার নিকট হার মানিয়া গেলেন। অন্যের তো কথাই নাই। কিন্তু অযোধ্যার রাজা অনরণ্য কিছুতেই তাঁহার নিকট হার মানিতে রাজি হইলেন না। তিনি আগেই অনেক সৈন্য প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছিলেন, রাবণ তাঁহার রাজ্যে আসিবামাত্র সেইসকল সৈন্য লইয়া তিনি তাহার সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। হায়, তাঁহার সে সৈন্য রাবণের সৈন্যদের কাছে দুদণ্ডের মধ্যেই শেষ হইয়া গেল, নিজেও রাবণের হাতে ভয়ানক আঘাত পাইয়া রথ হইতে পড়িয়া কাঁপিতে লাগিলেন। রাবণ তখন তাঁহাকে বিদ্রুপ করিয়া বলিল, “কি? আমার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া এখন কেমন হইল?” অনরণ্য বলিলেন, “মরিতে তো একদিন সকলকেই হয়, কিন্তু আমি তোমার কাছে হটি নাই, যুদ্ধ করিয়া প্রাণ দিতেছি আর আমি এ কথা তোমাকে বলিতেছি যে, আমাদের এই বংশে দশরথের পুত্র রামের জন্ম হইবে, সেই রামের হাতে তুমি