পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭১৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

কাজেই রথে চড়িয়া তাঁহাকে স্বয়ংই বাহির হইতে হইল! সে যে কি ভয়ংকর রথ সে কথা আমি বলিয়া বুঝাইতে পারিব না। তাহার উপর আবার স্বয়ং মৃত্যু প্রাস মুদগর লইয়া ভীষণ বেশে যমের সম্মুখে দাঁড়াইয়া, কালদণ্ড প্রভৃতি ভয়ংকর অস্ত্রসকল ধূ ধূ করিয়া জ্বলিতেছে।

 সেই রথ আর তাহার ভিতর মৃত্যুকে দেখিয়াই রাবণের লোকেরা “বাপ রে। আমাদের যুদ্ধে কাজ নাই” বলিয়াই ঊর্দ্ধশ্বাসে চম্পট দিল। কিন্তু রাবণ তাহাতে ভয় না পাইয়া যমের সঙ্গে খুবই যুদ্ধ করিতে লাগিল। অস্ত্রের ভয় তো তাহার নাই, কারণ সে জানে যে ব্রহ্মার বরের জোরে সে মরিবে না! কাজেই অনেক খোঁচা যেমন খাইল, খোঁচা দিলও ততোধিক। খোঁচা খাইয়া যম রাগে অস্থির হইয়া উঠিলেন, তাঁহার মুখ দিয়া আগুন বাহির হইতে লাগিল।

 তখন মৃত্যু যমকে বলিল, “আমাকে আজ্ঞা করুন আমি এখনই এই দুষ্টকে মারিয়া দিতেছি। আমি ভালো করিয়া তাকাইলে আর ইহাকে এক মুহূর্তও বাঁচিতে হইবে না।” যম বলিলেন, “দেখ না, আমি ইহাকে কি সাজা দিই।” এই বলিয়াই তিনি রাগে দুই চোখ লাল করিয়া তাঁহার সেই ভীষণ ‘কালদণ্ড’ হাতে নিলেন। সে দণ্ড যাহার উপর পড়ে তাহার আর রক্ষা থাকে না।

 যমকে কালদণ্ড তুলিতে দেখিয়া ভয়ে সকলের প্রাণ উড়িয়া গেল, কে কোন দিক দিয়া পলাইবে তাহার ঠিক নাই, দেবতাদের অবধি বুক ধড়াস্ ধড়াস্‌ করিতেছে। তখন ব্রহ্মা নিতান্ত ব্যস্তভাবে ছুটয়া আসিয়া যমকে বলিলেন, “সর্বনাশ, কর কি? এই কালদণ্ড তুমি ছুঁড়িলেই যে আমার কথা মিথ্যা হইয়া যাইবে। কালদণ্ড আমিই গড়িয়াছি, রাবণকেও আমি বর দিয়াছি। আমিই বলিয়াছি যে কালদণ্ড কিছুতেই ব্যর্থ হইবে না। আবার আমিই বলিয়াছি যে রাবণ কোনো দেবতার হাতে মরিবে না। এখন এই অস্ত্রে যদি রাবণ মরে, তাহা হইলেও আমার কথা মিথ্যা হয়, যদিনা মরে তাহা হইলেও আমার কথা মিথ্যা হয়। লক্ষ্মীটি আমাব মান রাখ, এ অস্ত্র তুমি ছুঁড়িও না।”

 কাজেই যম তখন আর কি করেন? তিনি বলিলেন, “আপনি হইতেছেন আমাদের প্রভু, সুতরাং আপনার হুকুম মানিতেই হইবে। কিন্তু যদি এ দুষ্টকে মারিতেই না পারিলাম, তবে আর আমার এখানে থাকিয়াই কি ফল?” এই বলিয়া যম সেখান হইতে চলিয়া গেলেন। তাহা দেখিয়া রাবণ হাততালি দিয়া নাচিতে নাচিতে বলিল, “দুয়ো! দুয়ো! হারিয়া গেলি! হারিয়া গেলি!” ততক্ষণে অন্য রাক্ষসদেরও খুবই সাহস হইয়াছে, আর তাহারা আসিয়া, “জয় রাবণের জয়।”—বলিয়া আকাশ ফাটাইতে আরম্ভ করিয়াছে।

 ব্রহ্মার কথায় যম যুদ্ধ ছড়িয়া দিলেন। রাবণ ভাবিল, সেটি তাহার নিজেরই বাহাদুরী। তখন আর তাহার গর্বের সীমাই রহিল না। সে বাছিয়া বাছিয়া বড়-বড় যোদ্ধাদের সহিত বিবাদ করিয়া বেড়াইতে লাগিল। বরুণের পুত্রগণ তাহার নিকট হারিয়া গেলেন, বরুণ নিজে ব্রহ্মার বাড়িতে গান শুনিতে যাওয়ায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, তাই তাঁহার মান বাঁচিল। সূর্য যুদ্ধ না করিয়াই বলিলেন, “আমি হার মানিতেছি।” রাবণের ভগ্নিপতি বিদ্যুজিহ্‌ বেচারাও তাহার হাতে মারা গেল।

 কিন্তু সকল জায়গায়ই যে রাবণ বাহাদুরী পাইয়াছিল তাহা নহে। বলির বাড়িতে গিয়া সে অনেক বড়াই করিয়াছিল। বলি তাহাকে ধরিয়া নিজের কোলে বসাইয়া বলিলেন, “কি চাও বাপু?” রাবণ বলিল, “শুনিয়াছি বিষ্ণু নাকি আপনাকে আটকাইয়া রাখিয়াছেন। আমি