পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছোট্ট রামায়ণ
৭৩৯

বনে যেতে তিনজন করি তাঁরা মন
কাঙালে করিলা দান যত ছিল ধন।
সুমন্ত্র সারথি আনে রথ সাজাইয়া,
কৈকেয়ী গাছের ছাল দিলেন আনিয়া।
তাহা পরি দুই ভাই করিলেন সাজ,
সীতারে পরাতে নাহি দেন মহারাজ।
বেলা হল, বয়ে যায় যাবার সময়,
প্রণাম করিয়া রাম দশরথে কয়,
“বনে যাই, মহারাজ, দেহ পদধূলি,
দুখিনী মায়ের পানে চেয়ে মুখ তুলি।”
তারপরে তিনজনে চড়ে গিয়ে রথে,
পাগল হইয়া লোকে ছুটে যায় পথে।
কঁদিতে কাঁদিতে রাজা নিজে যান ধেয়ে,
ব্রাহ্মা সকলে যান, আর যত মেয়ে।
কাঁদিয়া কৌশল্যা যান; হায় রে দুখিনী—
আলুথালু হয়ে মাতা ধায় পাগলিনী।
কেমনে এ দুখ দেখি পরানেতে সয়?
“চল, চল,” বলি রাম সারথিরে কয়।
ছুটে যায় রথখানি তীরের মতন,
তার সাথে যেতে আর পারে কয়জন?
তবুও ছুটিয়া রাজা কতদুর যায়,
চলিতে না পারি আর বসিল ধুলায়
চাহিয়া রথের পানে কথা নাহি মুখে,
ঝরিয়া চোখের জল বয়ে যায় বুকে।
চলি গেল রথখানা, দেখা নাহি যায়,
অমনি লুটায়ে রাজা পড়িল ধুলায়!
কৈকেয়ী তুলিতে তারে আইল ছুটিয়া,
“দুর-দুর!” বলি রাজা দিল তাড়াইয়া।
তারপর কৌশল্যার হাতখানি ধরে,
ভাসিয়া চোখের জলে গেল তাঁর ঘরে।
সেথায় শুইল রাজা করি হায়-হায়,
ভাবিয়া রামের কথা বুক ফেটে যায়।

জানি রাম কতদুর যান ততক্ষণ,
কেমনে ছাড়িল তাঁরে অযোধ্যার জন?
তীরের মতন তাঁর রথখানি যায়