পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছোট্ট রামায়ণ
৭৪১

সুমন্ত্র কাঁদিল ফিরি অযোধ্যা নগরে।
বাঘ ভালুকের ঘর ঘোরতর বন,
তাহার ভিতর দিয়া যান তিনজন।
দিন গেল, রাত গেল, সন্ধ্যা এল ফিরে,
প্রয়াগে এলেন তাঁরা যমুনার তীরে।
যেথায় আসিয়া গঙ্গা মিলে যমুনায়,
মহামুনি ভরদ্বাজ থাকেন যেথায়।
মুনি বলে, “জানি রাম এলে কি কারণ,
আমার নিকটে বাপ থাক তিনজন।”
শ্রীরাম বলেন, “হেথা লোকজন চলে,
নিরিবিলি কোথা পাই মোরে দিন বলে।”
মুনি বলে, “চিত্রকুট পর্বতের তলে,
ছায়ায় লুকায়ে নদী মন্দাকিনী চলে।
দুই কূলে আছে গাছ ফল ফুলে ঝুঁকি,
হরিণ ময়ুর আসি দেয় সেথা উঁকি।
বনেতে কোকিল গায়, জলে হাঁস খেলে,
সুখেতে থাকিবে রাম সেইখানে গেলে।”
মুনির পায়ের ধূলা লইয়া তখন
যেথা সেই চিত্রকুট যান তিনজন।
সেথায় কুটির বাঁধি লতায়-পাতায়,
মনের সুখেতে তারা রহিলেন তায়।
হেথা রাজা দশরথ পড়ে বিছানায়।
ফেলেন চক্ষের জল করি হায়-হায়।
এমন সময়ে তাঁরে করিয়া প্রণাম,
কাঁদিয়া সুমন্ত্র কয়, “গিয়াছেন রাম।”
সে কথা সহিতে রাজা নারিলেন আর,
সেই রাতে গেল প্রাণ দেহ ঘড়ি তাঁর।
কাঁদিয়া-কাঁদিয়া সবে ছিল অচেতন,
কেহ না জানিল রাজা মরিল কখন।
পাগল হইলা তারা সকালে উঠিয়া,
ভরতের লাগি লোক চলিল ছুটিয়া।
রাজারে ডুবায়ে রাখি তেলের ভিতরে,
পথ চেয়ে রয় তারা ভরতের তরে।

সবে কাঁদে, কৈকেয়ীর মুখে শুধু হাসি,
সে ভাবে, ভরত বড় সুখী হবে আসি!’