পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
সেকালের কথা
৮০৫



আর্কঅপ্টেরিক্স

পৃথিবীতে তাহার নামও কেহ জানিত না।

আমাদের এই পৃথিবী যে কতদিনের তাহ কেহ বলিতে পারে না; কিন্তু এ কথা বেশ বুঝা যায় যে, তাহার ঢের বয়স হইয়াছে। ইহার মধ্যে তাহার ভিতরে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে।

প্রথমে পৃথিবী আগুনের মত গরম ছিল, পরে ক্রমে ঠাণ্ড হইয়া তাহার বর্তমান অবস্থা পাইয়াছে! এখন যেরদপ জীবজন্তু আর বৎসর পূর্বে তাহার কিছুই ছিল না। আবাব অতি প্রাচীনকালে পৃথিবী একেবারেই জীবজন্তুর বাসের অনুপযুক্ত ছিল। তারপর সে ক্রমে ঠাণ্ডা হইয়াছে, আর তাহার অবস্থার উপযোগী জীবসকল জন্মগ্রহণ করিয়াছে।

সকলের আগে কিরূপ জন্তু জন্মাইয়াছিল, তাহা বলা সম্ভব নহে। পৃথিবীর অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সে সকল জন্তু লোপ পাইয়াছে, আর হয়ত কোন চিহ্ন রাখিয়া যায় নাই।

জন্তু আবার লোপ পায়? হ্যা, পায়। বর্তমান সময়ে বলিতে গেলে আমাদের চোখের সামনেই কতকগুলি জন্তু লোপ পাইয়াছে। নিউজিল্যাণ্ড দ্বীপে মোয়া’ নামক একপ্রকার অতি বৃহৎ পক্ষী ছিল। প্রাচীন ভ্রমণকারীদের কেহ কেহ এই পক্ষী দেখিয়াছেন, এমন কথাও শুনা যায়। কিন্তু এখন আর সে পাখি নাই। মোয়ার ডিম এবং কঙ্কাল এখনো মাঝে মাঝে পাওয়া যায়, কিন্তু জীবিত মোয়া আর দেখা যায় না। মাদাগাস্কার দ্বীপে ‘ডোডো’ নামক আর এক প্রকার পাখি ছিল। এই পাখি পায়রার জাতীয়। সে উড়িতে জনিত না, অথচ খাইতে খুব ভাল ছিল। কোন কোন সাহেব এই পাখি খাইয়া তাহার অতিশয় সুমিষ্ট বর্ণনা রাখিয়া গিয়াছেন। যাহা খাইতে এত ভাল লাগে, তাহাকে যদি এত সহজে শিকার করা যায়, তবে মানুষের মত রাক্ষস তাহাকে দুদিনে খাইয়া শেষ করিবে, তাহ বিচিত্র কি? বৃহৎ অক্‌’ নামক আর একটি পাখিও এইরূপে অতি অল্পদিন যাবৎ লোপ পাইয়াছে। নিউফাউণ্ডল্যাণ্ডের উপকূলে এক সময়ে এই পক্ষী লাখে লাখে বাস করিত। ইহারও উড়িবার শক্তি ছিল না, কিন্তু জলে সাঁতরাইবার ক্ষমতা অসাধারণ ছিল। স্থলে ইহারা ভালরূপ চলিতে পারিত না। ঐ পথে যাতায়াত করিবার সময় জাহাজের লোকেরা লাঠি দ্বারা এই পক্ষী মারিয়া জাহাজ বোঝাই করিয়া লইয়া যাইত।

ম্যামথ নামক একপ্রকার লোমওয়ালা হাতি ছিল, তাহাও খুব বেশিদিন হয় নাই লোপ পাইয়াছে। প্রাচীন অসভ্য লোকেদের সময়ে এই জন্তু বর্তমান ছিল। তাহারা ইহার চেহারা আঁকিয়া রাখিয়া গিয়াছে।