পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৮০৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

বিষয় না হইতেও পারে! প্রাচীনকালের জন্তুরা যেমন তাহাদের চিহ্ন রাখিয়া গিয়াছে, সেরূপ সৌভাগ্য আমাদের হইবে কি না, তাহাই বা কে জানে। যাহা বলিতেছিলাম। চুনারের পাথরে ঢেউয়ের দাগ দেখিয়াছি। অবশ্য, এ কথাটা সহজেই বুঝিতে পারি যে, পাথরের উপরে ঢেউয়ের দাগ পড়া সহজ নহে। সুতরাং ঐ ঢেউয়ের দাগ যখন পড়িয়াছিল, তখন যে ঐ জিনিসটা সাধারণ নদীর তলার মতনই কোমল ছিল, পাথর ছিল না, এ কথা নিশ্চয়। শেষে কোন কারণে ঐ জিনিস জমাট বাধিয়া পাথর হইয়াছে। বালি জমাট বাধিয়া বেলে পাথর হয়, কাদা জমাট বাধিয়া স্লেট পাথর হয়। অনেক সময় নদী ঝরনা ইত্যাদির জলে এমন সব জিনিস মেশানো থাকে যে, সেই জলে বেশিদিন ভিজিলে গাছপালা পর্যন্ত পাথর হইয়া যায়। কেন এরূপ হয়, তাহা এখন বলিতে বসি নাই। কিন্তু এবাপ যে হয় তাহা বলার দরকাব, কারণ এইবীপ অবস্থায়ই অনেক সময় প্রাচীনকালেব জীবজন্তুব হাড় পাওযা যায। হাড়ের গঠন অবিকল বহিয়াছে, কিন্তু তাহা হয়ত আর এখন হাড় নাই—পাথব হইয়া গিযাছে। ঐরাপ পাথক হইযা না গেলে, হযত সে হাড় এতদিন থাকিত না, আর আমরাও তাহাব সম্বন্ধে কিছুই জানিতে পারিতাম না। পাথর খুঁড়িতে গিয়া জীবজন্তুর চিহ্ন অনেক সময়ই পাওয়া যায়। আগেকার লোকেবা ঐরূপ চিহ্ন পাইলে তাহাকে খুব একটা তামাশার ভাবে দেখিত বটে,কিন্তু উহা যে বাস্তবিকই একটা জন্তুর চিহ্ন, তাহা তাহারা মনে করিত না। অনেক সময় গোল আলুতে মানুষের মতন নাক মুখ থাকে। কলিকাতার মহামেলায় একটা লাউ দেখিয়াছিলাম, তাহাতেও ঐরূপ নাক মুখ ছিল। এরূপ ঘটনা অবশ্য হঠাৎ হইয়া যায়। তাহা ছাড়া বাস্তবিকই যে উহা মানুষের নাক মুখ, তাহা নহে। ঐ পাথরগুলি সম্বন্ধেও আগে লোকে ঐরাপ মনে-করিত। ইহাদের প্রকৃত অর্থ বুঝিতে অনেক সময় লাগিয়াছে। এক জিনিসকে সকলে সমানভাবে দেখে না। সাধারণ লোকে যাহা দেখিয়া একটা সাদাসিধা অর্থ করে, আর অনেক সময়ই হয়ত ভুল করে, বিদ্বান লোকেরা ঠিক সেই জিনিস দেখিয়াই তাহা হইতে এক নূতন কথা বাহির করেন। হাতির হাড়কে মানুষের হাড় মনে করিয়া কতবার লোকে ঠকিয়াছে। একটি ভদ্রলোক অনেকদিন কোন পাহাড়ে জায়গায় ছিলেন। সেই স্থান হইতে ফিরিয়া আসিয়া তিনি আমাকে বলিয়াছিলেন যে, সেদেশে নাকি এখনো দানবের হাড় পাওয়া যায়, আর সেই হাড় নাকি তিনি স্বচক্ষে দেখিয়া আসিয়াছেন;উহ্য যে হাতির হাড়, তাহা আমি নিশ্চয় বলিতে পারি। ফ্রান্স দেশে একবার এইরূপ কতকগুলি হাড় পাওয়া গিয়াছিল। এক ডাক্তার সেই হাড়গুলি কিনিয়া সকলকে বলিয়া বেড়াইতে লাগিল যে, ওগুলি রাজা টিউটোবোকসের হাড়—সে একটা প্রকাগু গোরের ভিতরে তাহ পাইয়াছে। সে আরো বলিল যে, সেই গোরটা ৩০ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট চওড়া ছিল, আর তাহার উপরে লেখা ছিল—