পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮১২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ভিতরে অতিরিক্ত পরিমাণে তরল পদার্থ থাকা খুব সম্ভব নহে। তবে, সে স্থানটা যে অতিশয় গরম, তাহাতে সন্দেহ নাই।

 চন্দ্রের আগাগোড়াই জমাট বাঁধিয়া গিয়াছে।

 যাহা হউক এ সকল কথায় আমাদের এখন প্রয়োজন নাই। আমরা পৃথিবীর ছেলেবেলার খবর লইতে চলিয়াছিলাম, তাহা কতক পাইযাছি। এখন খালি একটা কথা বলিলেই উপস্থিত কাজটা শেষ হয়। পৃথিবীতে যতরকমের পাথর আছে তাহাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। পৃথিবীর ভিতরকার গলিত জিনিস বাহিরে আসিয়া কতকগুলি পাথর হইয়াছে। আর পৃথিবীব উপরকার জিনিস ভাঙিয়া চুরিয়া বা অন্য কোন কারণে বদলাইয়া গিয়া আর কতকগুলি পাথর হইয়াছে। বেলে পাথর, স্লেট পাথর, খড়ি, কয়লা ইত্যাদি এই দ্বিতীয় শ্রেণীর পাথরের দৃষ্টান্ত। জীবজন্তু বা গাছপালার চিহ্ন যাহা পাওয়া যায়, তাহা এই সকল পাথরেই পাওয়া যায়।

 পৃথিবীতে আগে জন্তু হইয়াছিল, কি গাছপালা হইয়াছিল, এ কথার উত্তর দেওয়া একটু কঠিন; তবে গাছপালা আগে হইয়াছিল বলিয়াই মনে হয়। গাছেরা মাটির রস টানিয়া লইয়াই বাঁচিতে পা্রে, কিন্তু জন্তুদের পক্ষে খালি মাটির রস চুষিয়া বাঁচিয়া থাকা কঠিন।

 গাছই বল, আর জন্তুই বল, পৃথিবীর সেই প্রথম অবস্থায় ইহাদের কাহারই খুব বেশি উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। গাছের মধ্যে নানা রকমের শেওলা আর জন্তুর মধ্যে নানা রকমের পোকা, ইহাই পৃথিবীর প্রথম জীব। আর আর চিংড়ি মাছের জাতীয় জন্তুও প্রায় এই সময়েই দেখা দেয়। তখনকার এক একটা শামুক প্রায় এক একটি গাড়ির চাকার মতন বড় হইত। চিংড়িগুলিও নিতান্ত কম ছিল না। তাহার দু একটা কোন পুকুরে আছে জানিতে পারিলে, সে পুকুরে নামিয়া কাহারো স্নান করিতে ভরসা হইত কি না সন্দেহ। আধ হাত লম্বা চিংড়িটা জীবিত থাকিলে তাহার কাছে যাইতে ভয় হয়। সুতরাং সেকালের ছয় ফুট লম্বা চিংড়িগুলি যে এক একটা ভয়ংকর জানোয়ার ছিল ইহাতে আর সন্দেহ কি? ইহাদের বিদ্যাসাধ্যিও কম ছিল না। কেহ চিত হইয়া সাঁতরাইত, কেহ কেন্নোর মতন তাল পাকাইয়া থাকিতে পারিত, কেহ আবার পিছন ভাগে হটিয়া গিয়া মাটির ভিতরে ঢুকিতে পারিত।

 এ সকল চিংড়ি মাছ যে ঠিক আজকালকার চিংড়ি মাছের মত ছিল না, তাহা ছবি দেখিলে সহজেই বুঝিতে পারিবে। সকলগুলি আবার এই ছবির মতনও ছিল না। আবার, কোন-কোন বিষয়ে আজকালকার বিচ্ছুগুলির সঙ্গে ইহাদের খুব সাদৃশ্য দেখা যায়।

 চিংড়ির পরে পৃথিবীতে মাছের জন্ম হইইয়াছিল। এই সকল মাছের চেহারা কিরূপ ছিল, তাহার নমুনা দেওয়া গেল। এক একটা দেখিতে কি অদ্ভুত ছিল দেখ, ডানাদুখানি যেন কাঁকড়ার দাড়া! শরীরটা একটা শক্ত খোলায় ঢাকা। কেবল লেজটিতে মাত্র যা একটু মাছের পরিচয় পাওয়া যায়।

 এই সময়ে পৃথিবী অবশ্য এখনকার চাইতে বেশি গরম ছিল। পৃথিবীর জলের ভাগের বেশিটা হয়ত মেঘের আকারেই ছিল। সুতরাং আকাশ প্রায়ই মেঘলা থাকিত, সেই মেঘের ভিতরে সূর্যের আলো সহজে প্রবেশ করিতে পাইত না। আজকাল যেমন পৃথিবীর মাঝখানটা খুবই গরম, আর উত্তর দক্ষিণ খুবই ঠাণ্ডা সেকালে তেমন ছিল না বলিয়াই বোধহয়। তখন আগাগোড়াই প্রায় এক ভাবের গরম ছিল। বড় বড় সমুদ্র ছিল, কিন্তু তাহা বেশি গভীর ছিল