পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৮১৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

পাওয়া যায় নাই। অথচ ঐ সকল খনি হইতে ঐরূপ অনেক গাছের চিহ্ন আনিয়া এখানকার জাদুঘরে রাখা হইয়াছে। দুই-তিন শত হাত মাটির নীচে অন্ধকারের ভিতরে মুটেরা কয়লা খোড়ে। দিনমানের মধ্যে যত কয়লা ভুলিতে পারিবে ততই তাহাবা বেশি পয়সা পাইবে, এই কথাই ৩খন তাহারা ভাবে। সেই কয়লার ভিবে আবার কোন গাছপালার চিহ্ন থাকিতে পারে, এ কথা ৩াহারা জানেও না, জানিলেও ঐ অন্ধকারের ভিতরে তাহা সহজে চোখে পড়ে না; চোখে পডিলেও তিন ঘন্টা ধরিযা খুটিয়া খুটিযা সেটুকুকে আস্ত বাহির কবিবার অবসব তাহাদেব হয় না। তাহারা তো আর পণ্ডি৩ নহে, যে সেকালের খবরটা তাহাদেব না লইলেই নয’ তাহারা গরিব লোক, পেটে দায়ে কয়লা খুঁড়িতে আসিয়াছে। সুতরাং খনিতে গাছপালার চিহ্ন থাকিলেও ৩াহারা তাহা দেখিতে না পাইয়া কোলাইয়া গুড়া করিয়া দেয়। এই জন্যই কয়লা খনির লোকেরা ইহার কোন খবর রাখে সেকালেব মাছ। কিরূপ করিয়া এত বড়-বড় বন শেষে পাথুরে কয়লা হইল, আর কিরূপ করিয়াই বা তাহা এত মাটির নীচে চাপা পড়িল, এরূপ হইতে না জানি কতদিন লাগিয়াছিল, এ সকল কথা ভাবিতে গেলে অবাক হইয়া যাইতে হয়। পণ্ডিতেরা বলেন যে, ষাট ফুট পুরু কলার থাক হইতে লক্ষ বৎসরেরও অধিক সময় লাগে। ষাট ফুট কয়লা অনেক খনিতেই আছে কোন কোন খনিতে প্রায় ইহার দ্বিগুণ পরিমাণ কয়লা পাওয়া গিয়াছে। ইহার পর যদি এ কথা ভাবিয়া দেখা যায় যে, এই একশত কুড়ি ফুট কয়লার সমস্তটা এক সময়ে হয় নাই, তাহা হইলে মানিতে হয় যে, এই পরিমাণ কয়লা হইতে দুই লক্ষ বৎসরের অনেক বেশি সময় লাগিয়াছিল। একটা কয়লার খনিতে মাপিয়া দেখা গিয়াছে যে, সেখানে এক থাক কয়লা, এক থাক মাটি, এরূপ করিয়া প্রায় একশত থাক কয়লা আছে, কেবল কয়লা মাপিলে একশত কুড়ি ফুট হয়, আর মাটি আর কয়লা একসঙ্গে করিয়া মাপিলে দশ হাজার ফুটেরও বেশি হয়। এত কয়লা আর মাটি জমিতে কত লক্ষ বৎসর লাগিয়াছে, তাহা কে বলিতে পারে? শুধু কি কত লক্ষ বৎসর? কত গাছপালা পচিয়া এত কয়লা হইতে পারে, তাহাই একবার ভাবিয়া দেখ না! যোল ফুট কয়লা হইতে প্রায় তিনশত ফুট গাছপালার দরকার হয়। একশত ফুট কয়লা হইতে যে গাছপালা চাই তাহাতে প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচু পাহাড় হয়! এত গাছপালা যাহাতে ছিল সে সকল ন ন জানি কত প্রকাণ্ড ছিল। গাছপালা জলের নীচে পচিতে পচিতে গরম আর চাপ পাইয়া শেষটা কয়লা হইয়াছে।