পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

জায়গা ঢাকিয়া ফেলিত। খুব বড়গুলির দাঁত ছিল না। ইহাদের কোনটার লম্বা লেজ ছিল, আবার কোনটার লেজ প্রায় ছিল না বলিলেই হয়।

 রামফোরিংকস বলিয়া একরকম ছোট টেরোড্যাক্টাইল ছিল। ইহার লেজটি বেশ লম্বা; তাহার আগার গড়ন কতকটা গাছের পাতার মতন। খুব লম্বা বোঁটার আগায় একটা ছোট পাতা থাকিলে যেমন দেখায়, রামফোরিংকসের লেজ অনেকটা সেইরূপ ছিল। উড়িবার সময় এই লেজ দিয়া হালের কাজ চলিত। রামফোরিংকসের লেজের কথা ভাবিলে পাখির পালকের কথা মনে হয়।

 লিথোগ্রাফারেরা যে পাথরের উপর ছবি আঁকে, জার্মানি দেশে ঐরূপ পাথরের খনিতে রামফোরিংকসের চিহ্ন পাওয়া যায়। ঐ জাতীয় পাথরের খনিতে কাজ করিবার সময় মাঝে মাঝে দু-একটি পাখির পালকও দেখিতে পাওয়া যাইত। শেষে একবার একটা পাখির অনেকগুলি হাড় ও পালক পাওয়া গেল। এইসকল চিহ্ন ঠিক যেরূপ অবস্থায় পাওয়া গিয়াছিল, তাহার ছবি দেওয়া যাইতেছে। ইহাই পৃথিবীর প্রথম পক্ষী। যে স্থানে এই সকল চিহ্ন পাওয়া গিয়াছিল, তাহার নাম সোলেনহফেন। এইজন্য অনেক সময় ইহাকে ‘সোলেনহফেনের পাখি’ বলা হয়। কিন্তু ইহার বৈজ্ঞানিক নাম আর্কিওপটেরিক্স (পুরাতন পাখি)।

 এই চিহ্নগুলি দেখিলে পাখি ভিন্ন অন্য কোন জন্তুর চিহ্ন বলিয়া মনে হয় না। কিন্তু তাই বলিয়া যদি মনে কর যে এটা ঠিক আজকালকার পাখির মতন ছিল, তবে বড় ভুল হইবে। ছবিখানিকে একবার ভাল করিয়া দেখ। ইহাতে এই পাখির লেজটা স্পষ্ট দেখা যাইতেছে। এ লেজ ত ঠিক পাখির লেজের মতন নয়! পালকগুলি পাখির পালকের মতন, তাহাতে ভুল নাই; কিন্তু আসল লেজটি যে গোসাপের; তাহা হাড় কয়খানি দেখিলেই বুঝা যায়। গোসাপের লেজে জোড়া জোড়া করিয়া পালক পরাইয়া এই অদ্ভুত জন্তুর লেজ তৈয়ার হইয়াছে।

 মাথায় কতকটা পাখির মতন ঠোঁট আছে, আবার কুমিরের মতন দাঁতও আছে। ডানা দুখানি হঠাৎ দেখিলে পাখির ডানা বলিয়া ভ্রম হয়; কিন্তু একটু মনোযোগ দিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, উহা ঠিক আজকালকার পাখির ডানা নহে। এখন আমরা কোন পাখির ডানায় আঙুল দেখিতে পাই না (অর্থাৎ বাহির হইতে দেখিতে পাই না। পালকের ভিতরে খুঁজিয়া দেখিলে এখনো কোন পাখির ছোট ছোট আঙুল দেখিতে পাওয়া যায়।) কিন্তু এই আশ্চর্য পাখির প্রত্যেক ডানায় তিনটি করিয়া আঙুল। শরীরের হাড়গুলি কতক পাখির মতন, কতক গোসাপের মতন। এই পাখি কাকের মতন বড় হইত।

 আজকাল কোন পাখির মুখে দাঁত দেখা যায় না, কিন্তু সেকালের অনেক পাখির মুখে দাঁত ছিল। এই সকল দাঁতওয়ালা পাখির চিহ্ন আমেরিকায় পাওয়া গিয়াছে, একটার নাম ‘হেস্পারনিস’ অর্থাৎ পশ্চিমের পাখি। আমেরিকা ইওরোপের পশ্চিমে, সুতরাং সেখানে যে পাখি পাওয়া গিয়াছে তাহার নাম পশ্চিমের পাখি। এই পাখি অনেকটা পেংগুইন পাখির মতন ছিল। ইহার উড়িবার ক্ষমতা ছিল না; জলে সাঁতরাইয়া বেড়াইত। এইরূপ আর একটা পাখির চিহ্ন পাওয়া গিয়াছে তাহার নাম ‘ইক্‌থিয়র্নিস’ অর্থাৎ মাছ-পাখি। ইহার মেরুদণ্ডের হাড়গুলি মাছের হাড়ের মতন ছিল, তাই ওরূপ নাম হইয়াছে!