পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

এসে ঘাড়ে বসে, গোদা পায়ের লাথি লাগিয়ে চলে যাবে।

 একদিন একটা ফড়িং এসেছিল, সেটা দেখতে এমনি অদ্ভুত যে কি বলব। চুপ করে বসে থাকলে কখনো তাকে দেখে বলতে পারবে না যে সে খানিকটা গাছের ছাল নয়, সে একটা ফড়িং। হাত-পাগুলো গাছের ডালের মতো, পাখাগুলো গাছের ছালের মতো, রঙটি অবিকল শুকনো গাছের মতো।

 জানোয়ারের মধ্যে যেমন ব্যাঙ, পোকার মধ্যে তেমনি গুবরে পোকা। ওগুলোর কাণ্ড দেখে আমার বড্ড হাসি পায়। বোঁ—ওঁ—ওঁ!! করে এসে ঘরে ঢুকবে— ঢুকেই অমনি দেয়ালে ঢুঁ খেয়ে চিৎ হয়ে মেঝেয় পড়ে প্রাণপণে হাত-পা ছুঁড়তে থাকবে। তখন তাড়াতাড়ি বাটি চাপা দিলেই, বেটারা জব্দ হয়। জব্দ হয় বটে, কিন্তু সে কথা মানার দস্তুর তাদের নাই। চাপা দিবার খানিক পরেই দেখবে, সে তোমার বাটি ঠেলে নিয়ে চলেছে। সারারাত যদি অমনিভাবে বাটি চাপা দিয়ে রাখ, তবে সারা রাতই শুনবে খালি বাটি ঠেলার খন্‌খন্‌ শব্দ।

 একদিন একটা গুবরে পোকা এসেছিল, সেটা প্রায় দু ইঞ্চি লম্বা। দেখতে কালো, তার উপরে এই বড়-বড় সাদা ফুট্‌কি। মাথায় দুটো দাঁড়া, সে কি ভয়ানক! তাকে বাটি চাপা দিতেই অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। তোমার হাতে বাটি দেখলেই সে তোমার মতলব এঁচে নেবে, তারপর কি ছুটই দেবে! ছুটে গিয়ে কপাটের আড়ালে ঢুকে, সেখান থেকে উঁকি মেরে তোমাকে দেখতে থাকবে। এগুলোর কামড়ে নাকি বিষ আছে, তার ঘা শিগ্‌গির শুকোয় না।

 রাত্রে এই-সব, আর দিনের বেলায় মাছি আর বোলতা। মাছির কথা আর কি বলব? সে তো সকলেই জানে। এরাই নাকি গায়ে হাতে করে ভয়ানক ভয়ানক বেয়ারামের বীজ এনে আমাদের গায়ে আর খাবারের ভিতর রেখে যায়। তবেই ভাব, এরা আমাদের কিরকম শক্র। দুপুরবেলায় একটু ঘুমুতে গেলে এরা এসে নাকে মুখে সুড়সুড়ি দিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলে। ক্ষুদে মাছিগুলো আবার এর চেয়েও দুষ্টু। আমি লিখছি আর ওরা পিন্‌ পিন্‌ পিন্‌ করে এসে খালি আমার নাকের আর চোখের ভিতর ঢুকতে চেষ্টা করছে। চোখে চশমা আছে, তাতেও ওদের গ্রাহ্য নেই, চশমার পাশ দিয়ে একেবারে চোখের ভিতরে গিয়ে উপস্থিত হয়, তখন তাকে মারবারও জো নেই, তা হলে চশমা ভেঙ্গে যাবে। সেদিন ঠিক এমনি করে চোখের ভিতর থেকে ক্ষুদে মাছি তাড়াতে গিয়ে এক বাবুর থাপ্পড় লেগে তাঁর চশমা উড়ে গিয়েছিল।

 পিঁপড়েগুলোও কম নয়। আমি দেখতে পাচ্ছি, আমার ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে এক্ষুনি একটা এসে আমাকে, উঃ, কি কামড়ই দিল। এক-এক সময় আট-দশটা মিলে একসঙ্গে কামড়াতে আসে।

 এদের সকলের চেয়ে অবশ্যি বোলতাকেই আমার বেশি ভয় করে। আজ অন্যদিনের চেয়ে এদের একটু কম আনাগোনা দেখছি; তবে এরই মধ্যে দু তিনজন এসে আমার খবর নিয়ে গেছে। চার বছর আগে একটা বোলতা আমাকে কামড়িয়েছিল, এখনো তার দাগটি আমার হাতে আছে। ছেলেবেলায় এদের কত কামড়ই খেয়েছি। তখন থেকেই এই পোকাগুলোকে আমি ভারি ভয় করি। একবার একটার তাড়া খেয়ে এমনি ছুট দিয়েছিলাম যে সিকি মাইল আমার পিছু পিছু তাড়িয়ে সেটা আমাকে ধরতে পারে নি। আমাদের বাড়ির কর্ত্রীকে যে বোলতায় কামড়িয়েছিল, তার কথা এখনো তিনি মাঝে মাঝে দুঃখের সহিত