পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৯৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এরূপ সৃষ্টিছাড়া অঙ্গুষ্ঠ দিয়া উহার বিশেষ কি কাজ হইত, তাহা জানিতে কৌতুহল হয়। ইচ্ছা করিলে উহা যে সাংঘাতিক অস্ত্ররূপে ব্যবহৃত হইতে পারিত তাহাতে সন্দেহ নাই। যুদ্ধকালে শত্রুর শরীরে মূলাদি অন্বেষণ কালে মৃত্তিকায়, আহারের সময় নারিকেলাদি ফলের কঠিন আবরণে, ইত্যাদি নানা অবস্থায় ইহার নানারূপ ব্যবহার সম্ভব দেখা যায়।

 ইণ্ডয়ানোডনের অস্থির সঙ্গে নানারূপ উদ্ভিদের চিহ্ন পাওয়া যায়। তাহা দেখিয়া বোধহয় যে ঐ সময় তাল, নারিকেল প্রভৃতি জাতীয় বৃক্ষাদির প্রাদুর্ভাব ছিল।

 সরীসৃপ জাতীয় জন্তু। সে পক্ষীর ন্যায় দুইপদে ভর করিয়া চলিত, আর গো মহিষাদির ন্যায় চর্বণ করিয়া শাকসব্‌জি ভক্ষণ করিত। সুতরাং ইহার রীতিনীতি কিয়ৎ পরিমাণে শাস্ত্র বহির্ভূত হইবারই কথা।

 চলনের ভঙ্গী এবং পদাদির অস্থির গঠনের সহিত পক্ষীর মিল এরূপ জন্তু আবিষ্কৃত হইতে লাগিল। এই সকল জন্তুকে পণ্ডিতেরা সরীসৃপের শ্রেণী হইতে পৃথক করিয়া “ডাইনোসর” নামক এক নুতন শ্রেণীর সৃষ্টি করিলেন। “ডাইনোসর” শব্দের অর্থ ভীষণ সরীসৃপ। ইহাদের সকলেই ইণ্ডয়ানোডনের ন্যায় নিরামিশাষী ছিল না; অনেকেই ব্যাঘ্র ভল্লুকাদির বৃত্তি অবলম্বনপূর্বক মাংস খাইয়া জীবনধারণ করিত। ইঁদুরের মত ছোট হইতে আরম্ভ করিয়া তিমির মত বড় পর্যন্ত সকল আকারেরই ডাইনোসর ছিল। হস্তী অপেক্ষা বৃহৎ, অশ্ব অপেক্ষা বেগবান, ব্যাঘ্র অপেক্ষা হিংস্র ডাইনোসর অনেক ছিল। জল স্থল ব্যোম সর্বত্রই ইহারা বিচরণ করিত। চেহারার কথা আর কি বলিব! কাহারও শরীর বর্মাবৃত কাহারও কলেবর কণ্টকাকীর্ণ। এক ব্যক্তির ২৫ ফুট দীর্ঘ বিশাল দেহে এবম্বিধ সজ্জার উপরেও আবার গলায় একটি হাঁসুলী কপালে দুটি শৃঙ্গ, নাকের উপর একটি খড়গ এবং মুখের চঞ্চুর আভাস। রীতিমতন চঞ্চুবিশিষ্ট ডাইনোসরেরও অভাব ছিল না।

 সর্বশেষে পক্ষবিশিষ্ট ডাইনোসর। ইহাদের চঞ্চুও ছিল, পক্ষও ছিল। পাখা দুটি পক্ষীর পাখার মতন নয়, কতকটা বাদুড়ের পাখার মতন।

 এইরূপে দেখা যায় যে ডাইনোসরদিগের সহিত পাখীর সম্বন্ধ ক্রমেই ঘনীভূত হইয়া আসিতেছে। বাস্তবিক পণ্ডিতদিগের সাধারণ মত এই যে পাখীরা হয় ডাইনোসরদের বংশধর, না হয় অতি নিকট আত্মীয়।

 ইহার প্রমাণ স্বরূপ প্রাচীনকালের একটি পাখীর দৃষ্টান্ত দেওয়া হইতেছে। ইহা অপেক্ষা পুরাতন কোন পক্ষীর চিহ্ন অদ্যাপি পাওয়া যায় নাই। পণ্ডিতেরা ইহার নাম রাখিয়াছেন “আর্কি অপ্টোরিক্‌স্‌” (পুরাতন পক্ষী)।

 ইহার চঞ্চুও আছে, দন্তও আছে। পক্ষীর ন্যায় ডানা অথচ তাহাতে তীক্ষ্ন নখযুক্ত অঙ্গুলি। সরীসৃপের ন্যায় দীর্ঘ লাঙ্গুল, কিন্তু সেই লাঙ্গুলের প্রত্যেক গ্রন্থির দুই পার্শ্বে দুটি পালক। মেরুদণ্ডের অস্থি সরীসৃপের ন্যায়।

 প্রাচীনকালের অনেক পক্ষীর মুখে দাঁত এবং হাড়ে সরীসৃপ অথবা মাছের লক্ষণ দেখা যায়। কেবল পক্ষীতেই যে এইরূপ নানা শ্রেণীর জন্তুর লক্ষণ মিশ্রিত দেখা যায় তাহা নহে, অন্যান্য অনেক জন্তুই সরীসৃপ স্তন্যপায়ী প্রভৃতি নানাবিধ প্রাণীর লক্ষণ এক শরীরে ধারণ করিত।

 বলিতে গেলে ইহার মধ্যে তেমন বিস্ময়ের কথা কিছুই নাই। প্রাচীনকালের রীতি এখনকার