পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯১৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

মালুম হয় না। কিন্তু ইহাতে ছাপিবার হাঙ্গামা ও খরচা বাড়িয়া যায়।

 ২। ছবিখানি আদর্শের চাইতে ঝাপসা হয়। যত মোটা স্ত্রীন ব্যবহার করা যায়, এ দোষ ততই অধিক পরিমাণে দেখা যায়। খুব সরু স্ত্রীনে ইহা প্রায় দেখা যায় না।

 ৩। ছবির উজ্জ্বল স্থানগুলিতে আলো ও ছায়ার তারতম্য তেমনভাবে রাখা যায় না। হাতে কাজ করিয়া ইহার আংশিক প্রতিকার হইতে পারে,কিন্তু তাহা সকল সময় বাঞ্ছনীয় নহে। কারণ তাহাতে চেহারা বদলাইয়া যাওয়ায় আশঙ্কা আছে।

 ৪। হাফটোন ছবি মাত্রেরই কাজ খুব সূক্ষ্ম:সুতরাং তাহা ছাপিতে পরিশ্রম ও ব্যয় বেশী পড়ে। ভাল কাগজ, ভাল কালি, ভাল ছাপা না হইলে ভাল হাফটোন্ ছবি হয় না।

 এই সকল দোষগুণের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া সহজেই বোঝা যাইতে পারে যে উড্কাট্‌ অপেক্ষা হাফটোন ছবি কোন বিষয়ে শ্রেষ্ঠ, আর কোন বিষয়ে নিকৃষ্ট। উড্কাট্‌ ছাপিতে মুশকিল নাই, আর তাহাতে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম খুঁটিনাটি সহজেই দেখান যায়। সুতরাং ছোট ছোট জিনিসের পরিষ্কার আভাস দিতে হইলে, আর অল্প ব্যয়ে ছাপিবার দরকার হইলে, উড্কাট্‌ ব্যবহার করাই প্রশস্ত। সাধারণতঃ দোকানদারের ক্যাটালগে, অল্প মূল্যের স্কুলপাঠ্য বহি, ইত্যাদিতে উড্কাটই বেশী ফল দেয়। (এ স্থলে একটা কথা বলা আবশ্যক। ফটোগ্রাফীর সাহায্যে হাফটোন ভিন্ন অন্য এক প্রকারের ব্লক প্রস্তুত হইতে পারে। আদর্শটি এইরূপভাবে অঙ্কিত করা যাইতে পারে যে, তাহাতে ব্লক করিতে আর স্ত্রীনের সাহায্যে দানা ফলাইবার প্রয়োজন হয় না। সাদা কাগজে, গাঢ় কৃষ্ণ কালিতে কলমের দ্বারা ছবি আঁকিলে, সে ছবি এই শ্রেণীর হয়। ফটো এনগ্রেভিং প্রণালীতে এইরূপ ছবি হইতে অবিকল আদর্শের অনুরূপ ব্লক প্রস্তুত হয়; তেমন ব্লক উড এনগ্রেভিং দ্বারা হওয়া সম্ভব নহে। অবশ্য, ইহাকে হাফটোন ব্লক বলে না, ইহার নাম লাইন ব্লক’। ভাল কালি কলমের’ ছবি আদর্শ হইলে তাহ হইতে উড়কাট্‌ না করাইয়া লাইন ব্লক করাইলে অধিকতর সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়।)

 কিন্তু যেখানে সুন্দর মোলায়েম ছবি চাই, চেহারা অক্ষুণ্ণ থাকা চাই, খরচপত্র পরিশ্রমে আপত্তি নাই, একটু ঝাপসা হইলেও ক্ষতি নাই, সেখানে হাফটোনের দরকার।

 অবশেষে, যদি বেয়াদবি না হয়, তবে হাফটোন্ ব্লকের ভাল মন্দ কিসে হয়, তৎসম্বন্ধে কিঞ্চিৎ নিবেদন করি। আদর্শের শেড়লাইট—বিশেষতঃ উজ্জ্বল স্থানগুলিতে—যে পরিমাণে রক্ষিত হইবে, সেই পরিমাণে ব্লকটিকে ভাল বলিব। ইহার উপরে ছবিখানি দেখিতে যত মোলায়েম হইবে, ততই তাহ আরও উঁচুদরের হইবে। অতঃপর (মুদ্রাকরের দিক হইতে) ছাপিবার সময় যে ব্লকখানি যত কম নাকাল করিবে, অবশ্য তাহা এক হিসাবে ততই প্রশংসনীয় হইবে। কিন্তু এই শেষ কথাটার সম্বন্ধে একটু বক্তব্য এই যে, ছবি খুব মোলায়েম রাখা, আর মুদ্রাকরকে ষোল আনা সস্তুষ্ট করা, এ দুটি ব্যাপার এক সময়ে ঘটান সুকঠিন। মুদ্রাকরের যন্ত্র, মালমসলা এবং যোগ্যতা যথোচিত হইলে এ বিষয়ে চিন্তার কারণ থাকে না বটে, কিন্তু এ দেশকালে তাহ সচরাচর ঘটে কই?

 যেমন তেমন একটা হাফটেন ব্লক প্রস্তুত করা অতি সহজ কাজ কিন্তু আদর্শের মর্যাদা রক্ষা করিয়া ছবিখানিকে মোলায়েম করা একটু বেশী রকমের কঠিন।