পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

করিতেছে দেখি, দূরবীন দিয়াও তেমনি একটা কিছু মিটমিট করতে দেখি। একটু উজ্জ্বল দেখি বটে, কিন্তু কিছুমাত্র বড় দেখি না।

 অবশ্য শুধু চোখে যাহা দেখি, দূরবীন দিয়া তাহার চাইতে অনেক বেশী তারা দেখিতে পাই। দূরবীন যত ভালো হয়, তাহাতে তত বেশি তারা দেখা যায়। এত দুরেও তারা আছে যে, সেখানে দূরবীনেরও দৃষ্টি পৌঁছায় না। তাহারা যে কত দূরে, তাহা ভাবিতেও পারি না। বাস্তবিক আকাশের কথা অতি আশ্চর্য। কিন্তু শুধু আশ্চর্য বলিয়াই যে লোকে আকাশের খবর এত করিয়া লয়, তাহা নহে। এ-সকল কথা জানাতে আমাদের বিস্তর উপকারও আছে। এমন-কি, আকাশের সম্বন্ধে লোকে এতদিন ধরিয়া যত কথা শিখিয়াছে, এখন যদি হঠাৎ তাহার সমস্তই ভুলিয়া যাওয়া যায়, তবে ভারি মুস্কিল হইবে। প্রথম কথা দেখ, আমাদের সময়ের ঠিক থাকিবে না। সূর্যের দিকে চাহিয়া আমরা সময় ঠিক করি। মোটামুটি সকাল, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত, সকল কথাই সূর্যের মুখ চাহিয়া। তাহার চাইতে বেশি হিসাবের কথা—অর্থাৎ ঘণ্টা, মিনিট, সেকেণ্ড ইত্যাদি ঘড়ির হিসাবের কথা—যদি বল, সেখানেও দেখিবে, আকাশকে ছাড়িয়া কাজ চলে না।

 একটার সময় কলিকাতায় তোপ পড়ে। তখন সকলে নিজের ঘড়ি ঠিক করিয়া লয়। তোপ কি করিয়া পড়ে জান? আকাশের সম্বন্ধে যত কথা জানা গিয়াছে তাহা লইয়া জ্যোতিষশাস্ত্রের সৃষ্টি হইয়াছে। ইংরাজিতে ইহাকে বলে Astronomy। সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, তারা ইহাদের কোনটা আকাশের কোন স্থানে কোন সময়ে থাকে, জ্যোতিষশাস্ত্রের দ্বারা অঙ্ক কষিয়া তাহা স্থির করা যায়। ঐরূপে অঙ্ক কষিয়া এ-সকল কথা স্থির করিয়া পুস্তকে লিখিলে তাহাকে বলে পঞ্জিকা। কোনদিন ঠিক কোন সময়ে সূর্য আমাদের মাথার উপরে আসিবে, পঞ্জিকা দেখিয়া জানা যায়। সূর্য আমাদের মাথার উপরে আসিবার সময় যদি ঘড়িতে ঠিক সেই সময়টি দেখায়, তবেই বলিতে পারি, ঘড়ি ঠিক। তাহা যদি না হয়, তবে ঐ সময় পঞ্জিকার সঙ্গে মিলাইয়া ঘড়ি ঠিক করিয়া দিতে হয়। সময় দেখিবার জন্য একটা আপিস আছে। এই আপিসে একটা ভালো ঘড়ি আছে। সূর্য মোটামুটি বারোটার সময় আমাদের মাথার উপরে আইসে। ঐ সময়ে ঐ আপিসের লোকের দুরবীন দিয়া সূর্য দেখিয়া ঘড়ি ঠিক করে। তারপর একটার সময় ঐ ঘড়ি দেখিয়া তোপ ফেলা হয়। সূর্য, তারা, এ-সকলের সাহায্য না পাইলে ঘড়ি ঠিক রাখা সম্ভব হইত না। তার ফল এই হইত যে, তোমরা কেহ দশটার সময়ই ইস্কুলে গিয়া বসিয়া থাকিতে, আর কেহ বারোটার সময় যাইতে। মাস্টারমহাশয়ের নিতান্তই অসুবিধা হইত, তোমাদেরও পড়াশুনা ভালো করিয়া হইত না। যখন ইস্কুলে জলখাবারের ছুটি হইত, বাড়ির লোক হয়তো তখন খাবার পাঠাইত না। রেলে যাইতে হইলে আরো মুস্কিল হইত!

 সমুদ্রে জাহাজগুলি যদি আকাশ দেখিতে না পায়, তবে তাহাদের পথ চিনিয়া চলাই অসম্ভব হয়। আজ যদি সকলে আকাশের কথা ভুলিয়া যায়, তবে সমুদ্রে জাহাজ চলাও বন্ধ হইয়া যাইবে। যে-সকল জাহাজ এখন সমুদ্রে আছে, তাহারা সকলেই পথ ভুলিয়া যাইবে। আমরা যে নুনটুকু খাই, তাহাও জাহাজে আসে। সুতরাং জাহাজ চলা বন্ধ হইলে বড়ই মুস্কিল হইবে।

 আকাশের কথা জানিলে যেমন আনন্দ, তেমনি উপকার। এইজন্যই লোকে এত কষ্ট করিয়া আকাশের খবর লইতে ব্যস্ত হয়। ভালো করিয়া আকাশের খবর লইতে হইলে অনেক রকম যন্ত্র আর অনেক লেখাপড়া জানিবার দরকার। আমাদের যদিও তাহার কিছুই নাই, তথাপি আমরা