পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

নেকড়ে, বাঘ, জিরাফ, খরগোশ, ঈগল, হাঁস, পায়রা, গোসাপ, কাঁকড়া, বিছে ইত্যাদি। জিনিসপত্রের মধ্যে মুকুট, বীণা, দাঁড়িপাল্লা, জাহাজ ইত্যাদি।

 এইসকল নাম কি দেখিয়া রাখা হইয়াছিল, তাহা এখন বলিবার উপায় নাই। কোন কোনো স্থলে দেখা যায় যে, তারাগুলি মিলিয়া কোনো-একটা মানুষ বা জিনিসের চেহারার মতন হইয়াছে, কিন্তু অনেক স্থলেই এরূপ চেহারার মিল দেখা যায় না। যাহা হউক ইহাতে কাজের সুবিধা হইয়াছে তাহার ভুল নাই। সুতরাং ওসকল নাম কে রাখিয়াছিল, কেন রাখিয়াছিল, এত কথার আমাদের দরকার কি?

 নক্ষত্রমণ্ডলীর যেমন এক-একটা নাম আছে, তেমনি অনেকগুলি নক্ষত্রের নিজের একএকটা নাম আছে। একটা নক্ষত্র আছে, তাহার নাম ‘ধ্রুব’ অর্থাৎ স্থির। এই নক্ষত্রের উদয় অস্ত নাই, চিরকাল ইহা প্রায় একই স্থানে থাকে, এইজন্য ইহার ঐরূপ নাম হইয়াছে। ইহার সম্বন্ধে পরে আরো কিছু বলিব।

 সকলের চাইতে বড় যে নক্ষত্র তাহার নাম সিরিয়স। আমাদের দেশে জ্যোতিষশাস্ত্রে ইহাকে বলে মৃগব্যাধ। এখানে একটা কথা বলার নিতান্ত আবশ্যক হইয়াছে। তারা বলিতে মোটামুটি আমরা আকাশের যতগুলি জিনিসকে বুঝিয়া লই, তাহাদের সবগুলি ঠিক এক জিনিস নহে। যতগুলিকে আমরা তারা বলি, বাস্তবিক তাহাদের কতকগুলি গ্রহ, আর বাকি নক্ষত্র।

 আমাদের সূর্য যেমন,নক্ষত্রগুলির সকলেই তেমনি এক-একটি সূর্য। ইহাদিগকে যতবার দেখ একই স্থানে দেখিতে পাইবে।[১] কিন্তু একটা গ্রহকে আজ যদি এক স্থানে দেখ, কাল দেখিবে সে সেস্থান হইতে একটু দূরে চলিয়া গিয়াছে। অবশ্য বেশি দূরে নয়, কিন্তু এতটা দুরে যে, নক্ষত্রগুলির সঙ্গে তুলনা করিয়া বেশ বুঝিতে পারা যায় যে সে নড়িয়াছে।

 আমাদের পৃথিবীও একটা গ্রহ। আর গ্রহগুলিও এক-একটা পৃথিবী। ইহারা সকলেই সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। এইজন্যই ইহাদিগকে আকাশে স্থান পরিবর্তন করিতে দেখা যায়।

 আমি বলিতেছিলাম যে, সকলের চাইতে বড় নক্ষত্রটার নাম সিরিয়স্। আমি যখন নক্ষত্রের কথা বলিতেছি তখন গ্রহগুলিকে অবশ্যই বাদ দিয়া লইতে হইবে। দুটি গ্রহ আছে, যাহারা সিরিয়সের চাইতে উজ্জ্বল। ইহাদের একটি বৃহস্পতি, আর একটি শুক্র—যাহাকে শুকতারা বলে। ইহারা গ্রহ, সুতরাং ইহারা স্থান পরিবর্তন করে। অতএব ইহাদিগকে চিনিতে বেশি মুস্কিল হইবে না। অবশ্য এ কথা মনে রাখিতে হইবে যে, একবার বসিয়া ঘণ্টাখানেক তাকাইয়া থাকিলেই ইহাদিগকে স্থান পরিবর্তন করিতে দেখা যাইবে না। কারণ, ইহারা খুব ধীর গতিতে চলে। ক্রমাগত দুই-তিন দিন মনোযাগ করিয়া দেখলে, অনায়াসেই ইহাদের চঞ্চলতা ধরা পড়িবে।

 আকাশের ম্যাপ প্রস্তুত করিবার সময় গ্রহগুলিকে বাদ দিয়া সইতে হয়। যে নড়িয়া বেড়ায় তার একটা স্থান নির্দেশ করা সম্ভব কি? যে ময়রার দোকানের সামনে একটা ষাঁড় দাঁড়াইয়া আছে, সেই ময়রার নিকটে গিয়া সন্দেশ খাইতে যদি কেহ আমাকে হুকুম দেয়, তবে আমার মিষ্টমুখ করার ভরসা বড়ই কম থাকে। কারণ, ষাঁড়টির ততক্ষণে ময়রার

  1. (অবশ্য নক্ষত্রদেরও অনেকেরই উদয় অস্ত আছে সুতরাং এখানে দেখা যাওযার অর্থ উদয়াস্তের কথাটাকে বাদ দিয়া বুঝিতে হইবে। পৃথিবী ঘুরিতেছে, এইজন্যই ইহাদের উদয় হয়, এ কথা বোধ হয় তোমরা সকলেই জান। সুতরাং উদয়াস্ত হয় বলিয়া যে উহারা বাস্তবিকই নড়ে, তাহা নহে।)