পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৭২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এই সিরিয়সের আবার একটা সঙ্গী আছে, সেটাও প্রায় সাতটা সূর্যের মতন বড়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, উহার আলো নিতান্তই কম। এইজন্যই খুব ভালো দুরবীন না হইলে, উহাকে দেখিতে পাওয়া যায় না। সূর্য হইতে পৃথিবী যত দূরে, সিরিয়স হইতে তাহার সাঁইত্রিশ গুণ দূরে থাকিয়া সিরিয়সের এই সঙ্গীটি তাহার চারিদিকে ঘুরিতেছে। আমাদের উনপঞ্চাশ বৎসরে উহার একটি বৎসর হয়। এই সঙ্গীটিকেসুদ্ধ সিরিয়স নিজে মিনিটে একহাজার মাইল করিয়া ছুটিয়া চলিয়াছে অথচ আমরা শুধু চোখে দেখিয়া উহাকে স্থিরই মনে করিতেছি।

 শুধু চোখে যাহা দেখা যায়, তাহার কথা বলিতে গিয়া, আমরা এমন সকল কথা বলিতে আরম্ভ করিয়াছি যে, তাহার খবর দূরবীন ভিন্ন পাওয়া যায় না। বাস্তবিক ইহার পূর্বে দূরবীনের কই কিছু বলা উচিত ছিল। তবে যে এখান এ সকল কথা উঠিল, তাহার কারণ এই যে, নক্ষত্রগুলির সম্বন্ধে কোনো কথা বলিবার সুযোগ আর যে হইবে, এমন বোধ হয় না। সুতরাং এ কথাগুলি বলিতে হইলে, এইখানেই বলা ভালো।

 সিরিয়সের যেমন একটি সঙ্গী আছে তেমনি আরো অনেক নক্ষত্রেরই আছে। কোনো কোনো স্থানে তিন-চারিটা নক্ষত্রকেও দল বাঁধিয়া ঘুরিতে দেখা যায়। ইহারা সকলেই সূর্য। ইহাদের সঙ্গে গ্রহ (অর্থাৎ, যেমন আমাদের পৃথিবী। গ্রহদের নিজের আলো নাই, সূর্যের নিকট হইতে আলো পায়, আর তাহার চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়ায়) আছে কিনা, তাহা বলা কঠিন। কারণ গ্রহ থাকিলেও এত দূরে তাহাদিগকে দেখা যাইবে না।

 নক্ষত্রগুলিকে একটু মনোযোগ দিয়া দেখিলেই বুঝা যাইবে যে, উহাদের সকলের রঙ একরূপ নহে। কোনোটা সাদা কোনোটা একটু লালচে। সিরিয়স খুব সামান্য একটু নীল মিশানো সাদা রঙের। রোহিণীর (Aldebaran) রঙ অনেকটা লাল! দূরবীন দিয়া অনেক রঙিন তারা দেখা যায়। লাল, নীল, সবুজ, হলদে, বেগুনি প্রায় সকল রঙের তারাই আছে। ইহাদের কোনো কোনোটার রঙ আবার বদলায় বলিয়া বোধ হয়। সিরিয়স এখন সাদা, কিন্তু প্রাচীনকালের এক পণ্ডিত ইহাকে আগুনের মতন লাল রঙের বলিয়াছেন।

 এখন তারাগুলির সম্বন্ধে আর একটা কথা বলিলেই, আমার আজকার কাজ শেষ হয়।

 জিনিস হইতে আলো আসিয়া আমাদের চক্ষে পড়িলেই, আমরা সেই জিনিস দেখিতে পাই। একটা ঘরের দরজা জানলা বন্ধ করিয়া তাহাকে যদি অন্ধকার কর, আর সেই ঘরের দরজা বা দেয়ালের কোনো স্থানে যদি একটি শ্লেট-পেন্সিল ঢুকিবার মতো ছিদ্র থাকে, তবে সেই ছিদ্রের ভিতর দিয়া আলো আসিবে। এই ছিদ্রের সামনে এক খণ্ড সাদা কাগজ বা কাপড় ধরিলে দেখিবে যে, তাহাতে বাহিরের জিনিসের সুন্দর ছবি পড়িয়াছে। চক্ষের ভিতরেও এইরূপ করিয়া জিনিস হইতে আলো আসিয়া পড়ে, আর তার জন্যই আমরা সেই জিনিস দেখিতে পাই।

 এখন কথা হচ্ছে এই যে, একটা জিনিস হইতে আলো বাহির হয়, তারপর খানিক পথ চলিয়া, সেই আলো আমাদের চক্ষে পড়ে, এইরূপ করিতে তাহার সময় লাগে। যত বেশি পথ চলিতে হয়, তত বেশি সময় লাগে।

 আলো বড় ভয়ানক ছুটিয়া চলে। এত ছুটিয়া চলে যে, এই পৃথিবীর মধ্যে এক স্থান হইতে আর এক স্থানে যাইতে তাহার নিতান্তই কম সময় লাগে। তত কম সময়ে আমরা যন্ত্রের সাহায্যে ভিন্ন কোনো খবরই লইতে পারি না।