পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৭৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

নানারূপে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করিতেও ছাড়ে নাই।

 গ্যালিলিও তাঁহার দূরবীক্ষণ দিয়া দেখিলেন যে চন্দ্রের বড়বড় পর্বত আছেবৃহস্পতি গ্রহের চারিটি চন্দ্র আছে শুক্র গ্রহ্বে হ্রাস বৃদ্ধি হয়; অর্থাৎ আমাদের চন্দ্র যেমন পূর্ণিমার রাত্রিতে ঠিক গোল থাকে, তারপর দিন দিন একটু একটু কমিয়া শেষে অমাবস্যায় একেবারেই মিলাইয়া যায়, তারপর আবার একটু একটু বাড়িয়া আবার পূর্ণিমা ফিরিয়া আসিলে ঠিক গোল চাদটি হয়, শুক্র গ্রহেরও সেইরূপ হইতে দেখা যায়।

 গ্যালিলিও তাহার দুরবীন দিয়া দেখিয়া যখন বলিলেন যে, সূর্যের গায়ে কালো কালো দাগ আছে, তখন সকলে হাসিয়া উঠিল। অনেকে বলিল যে, ও কালো দাগ তোমার চোখেই আছে।

 যাহা হউক, এখন আমরা জানি, যে গ্যালিলিও ঠিক কথাই বলিয়াছিলেন। গ্যালিলিওর সময় হইতে এ পর্যন্ত ক্রমেই ভালো ভালো, বড় বড় দুরবীন প্রস্তুত হইয়াছে। সেই সকল দুরবীন দ্বারা আজকালকার লোক যাহা দেখিতেছে, গ্যালিলিও তাহা দেখিয়া যাইতে পারেন নাই। কালে আরো বড় বড় দূরবীন প্রস্তুত হইবে তাহাতে সন্দেহ নাই। তাহাদের সাহায্যে যাহা জানা যাইবে, না জানি তাহা কত আশ্চর্য।

 দূরবীনের কথা বলিতে গেলে পণ্ডিত হর্শেল সম্বন্ধে কিছু না বলিয়া থাকা যায় না। ইনি প্রথমে সিপাহী ছিলেন; তৎপর সৈন্যদল হইতে পলায়ন করিয়া শাস্তির ভয়ে নিজের জন্মস্থান জার্মানি দেশ হইতে ইংলণ্ডে আসিয়া গান বাজনার ওস্তাদের ব্যবসা আরম্ভ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই এই ব্যবসায়ে তাহার বেশ পশার হইয়া ছিল, কিন্তু শীঘ্রই তাহাকে এই ব্যবসায়ও ছাড়িতে হইল। হার্শেল দূরবীন দিয়া আকাশ দেখতে বড়ই ভালোবাসিতেন;কিন্তু তাহার ভালো দূরবীন ছিল না। একটু ভালো দূরবীনের জন্য তখনকার একজন বড় কারিকরকে লেখাতে সে ব্যক্তি ভয়ানক দাম-চাহিয়া বসিল। হর্শেল গরিব মানুষ, এত টাকা তিনি দিতে পারিলেন না;অথচ একটা ভালো দূরবীন তাহার চাই। সুতরাং তিনি স্থির করলেন যে একটা দূরবীন নিজে তয়ের করিয়া লইবেন।

 দূরবীক্ষণের নল অথবা তাহার স্কুপগুলি সহজেই প্রস্তুত করা যায়। কিন্তু উহার মধ্যে আসল জিনিস যে ঐ কয়েক খণ্ড কাচ, তাহাই প্রস্তুত করিতে ভয়ানক বুদ্ধি আর পরিশ্রমের দরকার। বড় কাচখানি গড়িতে এত পরিষ্কার হাতের দরকার হয় যে, উহার কোন জায়গায় এক ইঞ্চির কুড়ি হাজার ভাগের একভাগ মাত্র ভুল হইলেও তাহাতে কাজ আটকায়। ঐ বড় কাচখানিই দুরবীক্ষণের প্রাণ। দূরবীক্ষণের দামের অনেকটা এই কাচের জন্যই দিতে হয়। কোনো কোনো দূরবীক্ষণে এই কাচখানির পরিবর্তে একখানি আরশি থাকে। হার্শেলের সময়ে খুব বড় কাচওয়ালা দূরবীক্ষণ প্রস্তুত করিবার উপায় জানা ছিল না, আর কাচওয়ালা দুরবীক্ষণের অপেক্ষা আরশিওয়ালা দূরবীক্ষণ প্রস্তুত করিতে পরিশ্রম কম; সুতরাং তিনিও এইরূপ আরশিওয়ালা দূরবীক্ষণই প্রস্তুত করিবেন স্থির করিলেন।

 হর্শেল সমস্ত দিন তাহার ওস্তাদী ব্যবসায় করিতেন, সন্ধ্যার পরে দূরবীক্ষণের জন্য আরশি পালিশ করিতে বসি্তেন। এরূপ করিয়া খুব ভালো দূরবীন প্রস্তুত করা কিরূপ কঠিন কাজ তা বুঝিতেই পার। কিন্তু হর্শেল যে কেবলমাত্র ভালো দূরবীন প্রস্তুত করিয়াই সন্তুষ্ট ইয়াছিলেন, তাহা নহে—তিনি এত ভালো দূরবীন প্রস্তুত করিয়াছিলেন যে তেমন ভালো