পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৭৭

উঠিয়া দেখা সুবিধাজনক নহে। ঘরের মেঝের নীচে এমন কল আছে যে, দরকার হইলে সমস্ত মেঝেটাকে ইচ্ছামতো উঁচু-নিচু করা যায়। দূরবীনের গোড়া যখন খুব উঁচুতে উঠিয়া যায়, তখন তাহার সঙ্গে তাহার সঙ্গে মেঝেটাকেও উঁচু করিলে আর গোল থাকে না।

 যে স্তম্ভের উপরে দূরবীনটা আছে, তাহার ভিতরটা ফাঁপা। তাহাতে ঘড়ির মতন একটা প্রকাণ্ড কল আছে। দূরবীনটাকে একবার আকাশের কোনো জিনিসের পানে ফিরাইয়া ঐ কল চালাইয়া দিলে, আর সে জিনিস দূরবীনের ভিতর হইতে চলিয়া যাইতে পারে না। মনে কর, একটি তারা সন্ধ্যার সময় পূর্বদিকে দেখা দিয়াছে, আর তোমার ইচ্ছা হইল যে সমস্ত রাত্রি ধরিয়া ঐ তারাটিকে দেখিবে। এখন তুমি যদি একটিবার ঐ তারাটিকে দূরবীনের ভিতরে আনিয়া কল চালাইয়া দাও, তাহা হইলে তারাটি ক্রমাগতই দূরবীনের ভিতরে থাকিবে। তারাটি যেমন ক্রমে ক্রমে উপরে উঠিয়া মধ্যরাত্রে মাথার উপরে আসিবে, দূরবীনও তেমনি ক্রমে একটু একটু ঘুরিয়া মধ্যরাত্রে মাথার উপরের দিক লক্ষ্য করিবে। ভোরবেলা তারাটি যখন পশ্চিমে অস্ত যাইবে, দূরবীনও তখন ঠিক সেই দিকে মুখ ফিরাইবে।

 ছবির দিকে একটু মনোযোগ করিয়া দেখিলে দেখিতে পাইবে যে দুরবীনের গায় ছোটছোট কয়েকটি দূরবীন আঁটা রহিয়াছে। বড় দূরবীন দিয়া আকাশের জিনিসগুলিকে খুঁজিয়া বাতিল করা খুব কঠিন কাজ; এইজন্য ঐ ছোট দুরবীনগুলি উহার গায়ে পরানো রহিয়াছে। একটা জিনিসকে বড় দূরবীন দিয়া দেখিতে হইলে আগে ঐ ছোট দূরবীনের কোনো একটা দিয়া তাহাকে খুঁজিয়া বাহির করিতে হয়। সেই জিনিসটি যখন ঐ ছোট দুরবীনের ঠিক মাঝখানে আইসে, এখন বড় দূরবীনের ভিতরেও তাহাকে দেখিতে পাওয়া যায়।

 দূরবীনের গোড়ার দিকে অনেকগুলি খুঁটিনাটি জিনিস দেখা যাইতেছে। অনেকগুলি ডাণ্ডা দেখা যায়, তাহাদের মাথায় এক-একটা চাকা পরানো। এই চাকাগুলিকে পাক দিয়া দূরবীনটাকে ইচ্ছামতো ঘুরানো ফিরানো ইত্যাদি নানান কাজ করা যায়।

 দূরবীনটা একটা ঘবের ভিতরে রহিয়াছে। ঐ ঘবের উপরটা গম্বুজের মতন। সেই গম্বুজের গোড়া হইতে আগা পর্যন্ত একদিকে ফাঁক আছে:ঐ ফাঁকের ভিতর দিয়া আকাশ দেখিতে হয়। দূরবীন যখন যেদিকে ফিরে, সমস্ত গম্বুজটাকে ঘুরাইয়া তাহার ফলকটিকে সেই দিকে আনিতে হয়। এই কাজ যাহাতে সহজে হইতে পারে, তজ্জন্য গম্বুজের নীচে চাকা পরানো আছে।

 এত কথার পর ইহা সহজেই বুঝিতে পারিবে যে, এরূপ একটা দূরবীনে ঢের টাকা ব্যয় হয়। লিক্ মানমন্দিরের দূরবীনটিতে সওয়া ছয়লক্ষ টাকা খরচ পড়িয়াছিল। এই টাকার চারিভাগের একভাগ অর্থাৎ একলক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার দুইশত পঞ্চাশ টাকা শুধু তিন ফুট চওড়া অবজেক্ট গ্লাসটির দাম।

 জেম্স্ লিক্ নামক এক সাহেবের টাকায় হইয়াছিল বলিয়াই লিক্ মানমন্দির নামটি হইয়াছে। লিক্ সাহেব অতিশয় দরিদ্রের সন্তান ছিলেন। লেখাপড়া অধিক শিখিতে পারেন নাই, কিন্তু ব্যবসায় করিয়া অনেক টাকা উপার্জন করেন। তাহার কোনো উত্তরাধিকারী না থাকায় এই সমস্ত টাকা তিনি একটি দূরবীক্ষণ এবং মানমন্দির নির্মাণের জন্য দিয়া গেলেন। তাহার উইলে লেখা ছিল যে এমন একটি দূরবীক্ষণ প্রস্তুত করিতে হইবে যে তেমন দূরবীক্ষণ আর হয় নাই। কিন্তু ঐ দূরবীক্ষণ প্রস্তুত হওয়ার পরে ইহার চাইতেও বড় দুইটি দূরবীক্ষণ তৈয়ার হইয়াছে।


উপেন্দ্র—১২৩