পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৭৯

দেখিলে আমরা কতই আনন্দিত হইতাম। পাণ্ডার নিজের সম্বন্ধে এমন বিশেষ সংবাদ আমরা কিছুই জানিতাম না, যাহাতে তাহাকে দেখিলে আমাদের ভারি সুখ হইবার কথা। কিন্তু তাহার একটি আশ্চর্য লম্বা থলে অথবা তাহার ভিতরকার প্রসাদের খাতিরেই শিশুকাল হইতে এপর্যন্ত তাহার কথা মনে করিয়া রাখিয়াছি। সেই প্রসাদের থলেসুদ্ধ সেই বুড়ো পাণ্ডা নিশ্চয় এই পথে গিয়াছিলেন। তখন তিনি আক্ষেপ করিয়া ছিলেন কি না তাহা আর এখন জানিবার উপায় নাই। কিন্তু ক্লেশ তাহার খুবই হইয়াছিল, এ কথা বলিতে পারি।

 এই পথ ভিন্ন আরো দেখিবার জিনিস আছে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে দুপুরবেলায় ঐ-সকল স্থানে মরীচিকা দেখিতে পাওয়া যায়। ঐ সময়ে একবার কটক গিয়াছিলাম, তখন আমি দেখিয়াছি, তাহার পূর্বে কেবল পুস্তকেই উহার কথা পড়িয়াছিলাম, চক্ষে দেখা হয় নাই। মরুভূমিতে মরীচিকা দেখিতে পাওয়া যায় এ কথাই জানিতাম। ও জিনিস যে মরুভূমি ছাড়িয়া আমাদের এত কাছে আসিয়া বসিয়া আছে, তাহা কি আর আমি জানি। কাজেই তখন আমি তাহার মর্ম বুঝিতে না পারিয়া উহাকে জলই মনে করিয়াছিলাম। কিন্তু কটক হইতে ফিরিবার সময় আমার এ ভ্রম দূর হইল। তখন একজন সাহেব আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি আমাকে বলিলেন, “দেখেছ কেমন মরীচিকা?” আমি অবাক হইয়া বলিলাম, “উহা জল নম “তিনি বলিলেন, “না, উহা মরীচিকা। সমুদ্রের কাছে গেলে আরো স্পষ্ট দেখা যায়।” তখন অনেক মনোযোগ করিয়া দেখিয়া বুঝিতে পারিলাম যে, উহা জল নয়।

 রাত্রিতে হাবড়া স্টেশন হইতে রওয়ানা হইয়া সকালে বালেশ্বরে গিয়া যখন ঘুম ভাঙ্গে, তখন বেশ বুঝা যায়, যে একটা নুতন স্থানে আসা গিয়াছে। স্টেশনের নামে আর বাঙ্গালা অক্ষর নাই, তাহার স্থানে ওড়িয়া ভাষা হইয়াছে। আমরা যেমন করিয়া বাঙ্গালা আর দেবনাগর অক্ষরে মাত্রা দিই, ওড়িয়া অক্ষরের মাত্রা তেমন করিয়া দেওয়া হয় না। সোজা কসিটির বদলে তাহাতে পুঁটুলী পাকাইয়া আনিতে হয়;আসল অক্ষরটি তাহাতে তলায় পড়িয়া থাকে। অনেক অক্ষরেরই আসল অংশটুকু সংস্কৃত অথবা বাঙ্গালা অক্ষরের ন্যায়।

 এইরূপ ওড়িয়া অক্ষর দেখিয়া, আর ওড়িয়া ভাষা শুনিয়া বেশ আমোদেই পথ ছাড়ায়। ইচ্ছা হইলে ইহার সঙ্গে ওড়িয়া জলখাবারের বিষয়টাও যোগ করিতে হানি নাই। তবে, তাহাতে আমোদ কতখানি হইবে, আর ক্ষুধাই বা কতটুকু কমিবে, তাহা যে খাইবে তাহার মেজাজ এবং দাঁতের উপর নির্ভর করে। অন্তত আমি একবার বালেশ্বর স্টেশনের জলখাবারের যে নমুনা দেখিয়াছিলাম, তাহ বাস্তবিকই যদি ঐ অঞ্চলের গুণপনার নমুনা হয়, তবে এ কথা বলিতে পারি, তাহদের জিনিস খুব মজবুত। খাইবার সময় তাহা যেমন মজবুত, পেটের ভিতর গিয়াও যে তাহার চাইতে কম টেকসই হইবে তাহা মনে হয় না। সুতরাং এক ঠোঙ্গা কিনিলে ক্ষতি কি! আর কিছু লাভ না হউক, পুরী পর্যন্ত অবশিষ্ট মাইল শতেক এই এক ঠোঙ্গা মিঠাইয়ের চর্চাতেই উত্তমরূপে কাটানো যাইবে।


 পথে ভুবনেশ্বর স্টেশনের কাছে একটু সতর্ক হওয়া আবশ্যক, কারণ ট্রেন হইতে তথাকার মন্দিরগুলির দৃশ্য দেখিতে খুব সুন্দর। আর খুরদা স্টেশনে নামিয়া যে গাড়ি বদলাইতে হয়, সে কথাটাও না ভুলাই ভালো,কারণ তাহাতে পুরী পৌছাইবার ব্যাঘাত হইতে পারে। তবে,