পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৮১

জন্য রাখিয়া দিবে। জগন্নাথের প্রসাদ ফেলিয়া দিবার জো নাই। বাসি হইয়া পচিয়া গেলেও তাহা খাইতে হইবে। জগন্নাথের প্রসাদ খাইতে জাতির বিচার নাই। চণ্ডাল যদি ব্রাহ্মণকে প্রসাদ আনিয়া দেয়, তাহাও তাহাকে খাইতে হয়।

 পুরীতে গোদের প্রাদুর্ভাবটা কিছু বেশি। সেখানকার লোকের নাকি এই বিশ্বাস যে, জগন্নাথের প্রসাদ মাড়াইলে গোদ হয়।

 পুরীতে গিয়া প্রথমেই একটা ব্যাপার একটু আশ্চর্য বোধ হয়। সমুদ্রের ধারের স্থানগুলিতে গাছপালা বাড়িতে পায় না। বড়গাছগুলি আমগাছের মতন। নিমগাছ কুলগাছের মতন। অনেকগুলি গাছই আবার একপেশে। একদিকে কারো ডালপালা বেশ বাড়িয়াছে, কিন্তু আর এক দিকে বেশি ডাল নাই আবার যাহা আছে তাহাতেও পাতা খুব কম। সমুদ্রের ধারের বালি হাওয়ায় উড়াইয়া আনিয়া এই সকল গাছের ঐরূপ দুর্দশ করে। হাওয়ার দিন সমুদ্রের ধারে এই কথাটি বেশ বুঝিতে পারা যায়। খুব শুকনো দিনে বেশি হাওয়া হইলে, তাহার চোটে বালির কণাসকল ছুটিয়া আসিয়া গায়ে পড়ে। আর এত জোরে পড়ে যে, খালি চামড়ায় পড়িলে অনেক সময় তাহাতে পিপড়ের মতন বেদনা বোধ হয়। এই হাওয়ায় তাড়ানো বালির দৌরাত্ম্যে গাছের কচি পাতাগুলি প্রায় মারা যায়।

 সমুদ্রের হাওয়া সমুদ্র ছাড়িয়া বেশি দূরে যায় না। সুতরাং সমুদ্রের কাছের গাছপালারই এইরূপ দুরবস্থা। সমুদ্র হইতে দূরে বড় বড় গাছের অভাব নাই। তাহা ছাড়া এক এক রকমের গাছ সে দেশের মাটিতে স্বভাবত খুব বাড়ে বলিয়া বোধ হইল। প্রথমে পুরীর বাসায় ঢুকিয়াই দুটি পেপে গাছ দেখিলাম; তেমন বড় পেপেগাছ আমি আর কখনো দেখি নাই। সে দেশে পেপের নাম অমৃত ভাণ্ড। এমন জমকাল নামের গরিমায়ই বা সেখানকার পেপেগাছ ফুলিয়া এত বড় হয়! আর তাহার ডালপালাই বা কত বাড়ির পাশেই কয়েকটা বট গাছ ছিল। সে গাছগুলি যেমন উচু পেপেগাছগুলি বরং তাহার চাইতে একটু বেশি উচু। তবে, পরিসরে অবশ্য ঢের কম।

 একপ্রকার মনসাগাছও সেখানে খুব জন্মায় সেগাছের পাতা দেখিতে সাপের চক্রের মতন। একটা পাতার টিকির ভিতর দিয়া আর একটা বাহির হয়। ফুল-ফলও পাতার আগাতেই হয়। কুমড়ো ফুলের মতন বড়-বড় হলদে। সেই ফুলগুলি দেখিতে খুব সুন্দর।

 সে দেশের ঘরবাড়ি আমি বিশেষ প্রশংসা করিতে পারিলাম না। তিনটি চলনসই শয়ন ঘর, ভাড়ার, রান্না ঘর, একটি অতিশয় ক্ষুদ্র স্নানের খোপ, আর সেইরূপ আর একটি জায়গা তাহাতে কাঠ রাখা চলে। তিনটি বারান্দা, পাচিল ঘেরা আঙ্গিনা, ভিতরে একটি কুয়া। এইরূপ একটি বাড়ির জন্য আমাকে মাসে সত্তর টাকা করিয়া দিতে হইয়াছিল। দূরে ঐ বাড়ির চেহারা দেখিয়া ছেলেরা বলিয়াছিল, “য়্যা! বিচ্ছির বাড়িটি যদি আমাদের হয়”শেষটা সেই “বিচ্ছিরি” বাড়িতেই গাড়ি থামিল। গাড়ি হইতে নামিয়া দেখি, একটি কুকুর সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে। একটি সে-দেশী চাকরও ছিল;কিন্তু তাহার কথা তেমন উল্লেখযোগ্য নহে। কুকুরটা তাহার চাইতে ঢের ভালো লোক কুকুর হইলেও সে আমাদিগকে আদর-যত্ন করিতে ক্রটি করে নাই।

 কুকুর আর সেই চাকর ভিন্ন সে বাড়িতে আরো অনেকের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হইল। কিন্তু তাহারা মানুষ নয়, ছোট ছোট ব্যাঙ। একটা দুটো নয়, অনেকগুলি। ভাবে বোধ হইল,