পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

যেন তাহারাই সচরাচর ঐখানে থাকে। এমন নিশ্চিন্তভাবে পরের ঘরে থাকিতে আর কোনো জন্তু পারে না। কাজের মধ্যে তো দেখিলাম, খালি থপথপ করিয়া দেওয়ালের ধারে বেড়ানো, আর কোণে পৌছাইলে সেই কোণ বাহিয়া দেওয়ালে উঠিবার চেষ্টা। কাজটি অতিশয় কঠিন। দুই পা ছড়াইয়া দুদিককার দেয়ালে প্রাণপণে ঠেস না দিলে এ কাজ হইবার জো নাই। আর ছড়ানোও যেমন তেমন হইলে হইবে না। ব্যাঙ ভিন্ন অন্য কোনো জন্তুর সেরূপভাবে পা ছড়াইবার ক্ষমতা আছে কি না, বিশেষ সন্দেহের বিষয়। আর তাহা দেখিলে কি হাসিই পায়, তাহা কি বলিব! কিন্তু ব্যাঙ খুব ধীর প্রকৃতির জানোয়ার, যারপরনাই গম্ভীরভাবেই সে এ কাজ করিতে থাকে।

 এই ব্যাঙ তাড়ানোই কিছুদিন ছেলেদের কাজ হইল। সহজে কি তাহারা যায়। ধমকাইলে যে তাহারা কানে শোনে, তাহার কোনো প্রমাণই পাওয়া গেল না। লাঠি দিয়া খোচাইতে গেলে খালি একটু ব্যস্ত হয়, কিন্তু ঘরের বাহিরে যে যাইতে হইবে, এ কথা তাহদের মাথায়ই আসে না। শেষটা একটি ছেলে এক ফন্দি বাহির করিল। কাগজের ঠোঙ্গা সামনে ধরিয়া পিছনে তাড়া করিলে অতি সহজেই ব্যাঙ তাহাতে লাফাইয়া উঠে। তাহার পর তাহাকে বাহিরে ফেলিয়া দিলেই হইল।

 এইরূপ করিয়া ব্যাঙের উপদ্রব কমিল বটে, কিন্তু উই দেখা দিল। ঐ উইয়ের লোভেই এত ব্যাঙ আসিয়াছিল। উইয়েরা আমাদের জিনিসপত্র কাটিয়া আমাদিগকে অস্থির করিয়া তুলিল। বই আর জুতার উপরেই তাহদের বেশি আক্রমণ, বিশেষত জুতা যতই মজবুত হয়, ততই যেন উহ্য তাহার মিষ্ট লাগে। লোহা, পিতল ভিন্ন আর কিছুই তাহার দাঁতের কাছে টেকে না, খালি কেরসিন তেল এক জিনিস আছে, যাহার কাছে উই জব্দ থাকে।

 পুরীর ঘরের কথা বলিতে ব্যাঙ আর উইয়ের কথা উঠিয়াছিল তাহার পর দেশের মানুষের কথা আসা স্বাভাবিক। সেদেশের লোক আমরা এখানে বসিয়াই ঢের দেখিতে পাই। তাহারা কেমন কথা কয়, কেমন পান খায়, কেমন রাধে, কেমন সুরে পালকি বয় এসকল কাহারো অজানা নাই। একটা কথা অবশ্য মনে রাখা উচিত। আমাদের এখানে যাহারা পালকি বহিতে, চাপরাসী গিরি আর মুটের সর্দারি করিতে ও রাধিতে আসে, তাহদের দেখিয়া সে-দেশের ভদ্রলোকের সম্বন্ধে বিশেষ জানা যায় না। দুঃখের বিষয়, সেখানে গিয়াও আমি সেদেশের ভদ্রলোকদের সহিত মিশিবার সুযোগ পাই নাই। সেখানে গিয়াও সেইওড়িয়া ব্রাহ্মণ আর ওড়িয়া চাকর লইয়াইব্যস্ত হইয়াছি, আর সেই ওড়িয়া পালকিওয়ালার চ্যাচানিতেইকান ঝালাপালা হইয়াছে। একটা বড়রাস্তার পাশেই আমার বাসা ছিল, আর সেই রাস্তার সংলগ্ন একটি ঘরে দিনের বেলায় আমি বসিতাম। সুতরাং ওড়িয়া পালকি বেহারার সংগীত শুনিতে আমার ক্রটি হয় মাই। এখানকার ওড়িয়ার তেমন গান গাহিতে জানেইনা। সেখানে কোনো স্থান দিয়া একটা পালকি গেলে সিকি মাইল পর্যন্ত তাহদের আক্ষেপ শুনিতে পাওয়া যায়। মনে হয়, যেন তাহারা বড়ই বিপদে পড়িয়াছে, আর সেইবিপদটা যেন তাহদের পান্ধীর ভিতরে। কেহ কেহ বলিয়াছেন, যে সওয়ারটি ভারী হইলে নাকি ঐরাপ করিয়া তাহারা গালি দেয়। ইহা যদি সত্য হয়, তবে বলিতে হইবে যে পালকিতে উঠিবামাত্র সকলেই হঠাৎ ভয়ানক ভারী হইয়া যায়। আসল কথা কিন্তু তাহার কিছুইনহে। উহাদের ঐ