পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

যেমন চাকর তেমনি পাচক। তবে এ কথা বলার দরকার যে, আমি যে কয়েকটিকে পাইয়াছিলাম, তাহদের কেহই বোকা নহে। সুতরাং—আর থাক সে-সব কথা বলিয়া আর এখন লাভ কি? জিনিস তো আর ফিরিয়া পাইব না। উহাদের গায়ে যে হনুমানের মতন জোর ছিল না,ইহাই আমার সৌভাগ্য। নতুবা একদিন ভোরে উঠিয়া হয়তো দেখিতাম, যে আমরা ময়দানে বাস করিতেছি, বাড়িঘর কোথায় গিয়াছে, তাহার ঠিকানা নাই।

 পূর্বেই বলিয়াছি, আমি সেখানকার সাধারণ লোকের সহিত মিশিতে পাই নাই, সুতরাং তাহার সম্বন্ধে আমি বিশেষ কিছু বলিতে পারলাম না। দুইটা বিষয় আমি লক্ষ্য করিয়াছি। তাহারা গায়ে হলুদ মাখিতে খুব ভালোবাসে। আর তাহদের কেমন একটা বেখাপ্পা কৌতুহল আছে। পথ চলিতে চলিতে তোমাকে ডাকিয়া তোমার আবশ্যক অনাবশ্যক দশটা খবর লইয়া যাইবে। কবে এসেছ? কত দিয়ে ঘর ভাড়া করিলে? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর এত বার দিতে হইয়াছে, যে আমি চটিয়া যে গল্পের সেই রামা চাকরের মতন একটা কিছু করিয়া বসি নাই ইহা আমার বিশেষ প্রশংসার বিষয় বলিতে হইবে। রামা বাজারে মাছ কিনিয়াছে, সকলেই তাহার দাম জিজ্ঞাসা করে, তাহাতে রামার রাগ হইল। তখন রামা মাছ মাটিতে রাখিয়া রাস্তায় পড়িয়া চীৎকার করিতে লাগিল, আর হাত পা ছুঁড়িতে লাগিল। বাজারের সমস্ত লোক কাজকর্ম ফেলিয়া রামার কাছে আসিয়া উপস্থিত। সকলেই বলে, “কি হইয়াছে? কি হইয়াছে? রামা যখন বুঝিল, যে আর বেশি অবশিষ্ট নাই, প্রায় সকলেই আসিয়াছে, তখন সে আস্তে আস্তে উঠিয়া গা ঝাড়িল, আর মাছটি উচু করিয়া ধরিয়া বলিল, ওগো, আর কিছু নয়, আমার এই মাছটা সাড়ে সাত আনা হয়েছে, তোমরা সবাই শুনে রাখ! সাড়ে সাত আনা!! সাড়ে সাত আনা!!!

 মাছের কথা শুনিয়া হয়তো অনেকেই ভাবিতেছেন, সেখানে মাছ পাওয়া যায়। মাছ খুব পাওয়া যায়, কিন্তু তাহার কথা আজ বলিলে চলিবে না। অনেক কথা। আর একদিন খালি মাছের কথা বলা যাইবে।

 তরকারি বেশি পাওয়া যায় না। কচু, কুমড়া আর কাচকলার নাম লইলেই প্রধান জিনিসগুলির কথা একপ্রকার শেষ হয়। আলু তো জগন্নাথ খানই না, সুতরাং তাহা সেখানে জন্মায়ও না। ফলের সময় সেখানে যাই নাই, কাজেই কি কি ফল পাওয়া যায়, আর তাহা খাইতে কেমন, তাহা বলিতে অক্ষম। কলা বেশ, আর আম, পেঁপে, আতা, নোনা, কুল ইত্যাদির গাছ দেখিয়াছি, সুতরাং তাহাও পাওয়া যায়। তবে খাইতে কেমন, তাহা জানি না।

 দুধের বড়ই কষ্ট। দুধের দোষে নয়, গোয়ালার গুণে। দুদিন সেখানকার দুধ খাইয়াই বুঝিতে পারলাম যে, সে কলিকাতার গোয়ালার চাইতে অনেক বেশি বুদ্ধিমান। ডাক্তার বলিলেন, গাই না কিনিলে তোমার অসুখ সারিবে না। পরদিন সকালে গাই কিনিতে লোক পাঠাইলাম, একটি ছোট ছেলে তাহার সঙ্গে গেল। বেলা একটার সময় ষোলো টাকায় কচি বাছুর সমেত এক কালো গাই কিনিয়া তাহারা ঘরে ফিরিল! উহাদের দেরি দেখিয়া আমরা মনে করিয়াছিলাম, না জানি ক্ষুধায় ছেলেটির কতই কষ্ট হইতেছে,কিন্তু ফিরিবার সময় দেখি, তাহার গালভরা হাসি। একটা গরু কিনিলাম, আর একটা সঙ্গে দিয়াছিল বলিয়া সে মহা সন্তুষ্ট। তাহার খুব আশা হইয়াছে যে আর দুমাস পরে ছোট গরুটার দুধও খাওয়া যাইবে। গরুর কথা বলিতে সেখানকার দুটা বাড়ের কথা মনে হইতেছে। দুইটাতে সাংঘাতিক