পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৮৭

মতন একটা ভয়ানক শব্দ হয়;আর সেখানকার জলগুলি চুরমার হইয়া তুবড়িবাজির পাহাড়ের আকারের মতন লাফাইয়া উঠে।

 দূরে সমুদ্রের ভিতরের দিকে তাকাইলে এ সকলের কিছুই দেখিতে পাইবে না। সেখানকার ঢেউ অন্যরূপ। গভীর জল ছাড়িয়া যতই কম জলের দিকে আসা যায়, ততই এই সকল তীরমুখী লম্বা-লম্বা ঢেউ দেখিতে পাওয়া যায়। ঢেউগুলি অবশ্য সমুদ্রের ভিতরের দিক হইতেই আসে;কিন্তু গভীর জলে তাহারা তেমন উচু থাকে না, কাজেই তাহারা চোখে পড়ে না। তারপর যত কম জলের দিকে আসিতে থাকে, ততই ক্রমে উচু হইয়া শেষটা ভাঙ্গিয়া পড়ে। খুব লক্ষ্য করিয়া দেখিলে বোধহয় যেন ঢেউয়ের সামনের জলের বেগ কম, এমনকি, অনেক স্থলে ঠিক বিপরীত দিকেই তাহার গতি। এই উলটামুখো জলের সহিত ঠেলাঠেলির দরুনই তীরের কাছে এমন তুমুল কাণ্ড হয়। তীরে ঠেকিয়া সকল ঢেউকেই আবার ফিরিতে হয়। ইহা হইতেই ঐ উলটামুখো জলের উৎপত্তি। ঢেউগুলি তীরে ঠেকিয়া যখন ফিরিয়া চলে, তখন তাহাদিগকে অনেক দূর অবধি স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যায়। পথে আর একটা ঢেউয়ের সঙ্গে বিবাদ হইলেও তাহারা লোপ হয় না,বিবাদ থামিয়া গেলে আবার তাহাকে অনেকখানি অগ্রসর হইতে দেখিতে পাওয়া যায়। তবে মোটের উপর দেখা যায়, যে তীরমুখী ঢেউয়ের জোর বেশি। এই কারণেই সমুদ্রে একটা কিছু জিনিস ফেলিয়া দিলে খানিক বাদে সেটা আবার তীরে আসিয়া উপস্থিত হয়। লোকে বলে সমুদ্র কাহারো কিছু গ্রহণ করে না; যাহা দেওয়া যায়, তাহা সে আবার ফিরাইয়া দেয়।’

 খানিক আগে যে যাত্রীদের সমুদ্রকে খাইতে দিবার কথা বলিয়াছি, তাহার জিনিসপত্রও এইরূপে সমুদ্র ফেরত দেয়। খাইতে দেওয়া আর কিছুই নহে, কোনোরূপ ফল সমুদ্রে ফেলিয়া দেওয়া, তাহা হইলেই সমুদ্রের আহার করা হইল। যিনি ফল দিলেন, তিনি এ জীবনে আর সে ফল খাইতে পারিবেন না। আবার যেমন তেমন ফল দিলে হইবে না— অন্তত তাহতে পুণ্যকর্ম—নিজের অতিশয় প্রিয় ফল হইলেই হইল। সমুদ্রের ধারে যে সকল ফলের নমুনা দেখিয়াছি, আর বাজারে সমুদ্রের আহারের জন্য যেরূপ ফল বিক্রি হইতে দেখিয়াছি, তাহাতে বোধহয়, যে ছোট ছোট ভিন্ন অন্যরূপ ফল সমুদ্র মহারাজের ভাগ্যে অল্পই জুটিয়া থাকে। নচেৎ মানিতে হয় যে ভালো বড় ফল পাইলে মহারাজ তাহ ফিরাইয়া দিতে বিশেষ কুষ্ঠিত হন। আমি যে-সকল নারিকেল তাহাকে ফিরাইয়া দিতে দেখিয়াছি, তাহার আকার সাধারণত কামরাঙ্গার চাইতে বড় হইবে না, পটলের মতনও ছিল।

 তারপর সমুদ্রের ঢেউ খাওয়ার কথা। সে অতি চমৎকার ব্যাপার;তাহার কথা একটু বেশি করিয়া না বলিলে অন্যায় হইবে। সমুদ্রে নামিয়া স্নান করিতে গেলেই উহার ঢেউয়ের অত্যাচার সহ্য করতে হয়। এই অত্যাচারটি এমন বিধিপূর্বক হইয়া থাকে যে, একবার উহার আস্বাদান পাইলে আর কখনো তাহা ভুলিতে পারা যায় না। ইহাই ‘ঢেউ খাওয়া ‘, ইহাতে আমোদ যথেষ্ট আছে, উপকারও আছে, আবার আশঙ্কাও আছে। ঢেউয়ের বাড়িতে অনেকে গুরুতর আঘাত পায়, এমনকি, অনেকের মৃত্যু হয়। অনেক সময় কোনো হতভাগ্য লোক ঢেউয়ের টানে পড়িয়া জন্মের মতো অদৃশ্য হয়।

 অবশ্য এরূপ দুর্ঘটনা অনেক সময় অসতর্কতা আর সাঁতার না জানার দরুনই ঘটিয়া থাকে। ঢেউয়ের সঙ্গে লড়িতে গেলে তাহার আঘাত তো লাগিবেই। তাহার সামনে বেকুবের