পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৮৯

তাহার ডাঙ্গাতেই আর ভরসা কি? আমি অনেককে ঐরাপ করিতে দেখিয়াছি, আর তাহাদের দুর্দশাও দেখিয়াছি। ঢেউ আসিয়া অনেক দূর অবধি ডুবাইয়া ফেলিল, আবার হটিয়া গিয়া অনেকটা স্থান খালি করিয়া দিল। তখন ঐ খালি জায়গায় গিয়া একজন দাড়াইলেন। সে সময়ে তাহার চেহারা ঠিক পালোয়ানের মতন। ঢেউ আসিয়া উপস্থিত! তাহার ফলে মুহুর্তের মধ্যে সেই চেহারা আগে খুব ওস্তাদ বাজিকরের মতন, তারপরে উলটান কচ্ছপের মতন হইয়া গেল! ঢেউ ততক্ষণে চলিয়া গিয়াছে, আর স্নানের সখও একপ্রকার মিটিয়াছে এখন এই সুযোগে ডাঙ্গায় উঠিয়া আসিতে পারিলে হয়। কিন্তু উঠিবার চেষ্টায় কচ্ছপের অবস্থা হইতে প্রথমে ব্যাঙের, তারপর হাতির অবস্থায় আসিতে না আসিতেই পিছন হইতে আর এক ঢেউ আসিয়া তাহাকে আগের কুমিরের মতন করিয়া ফেলিল, শেষে কলাগাছের মতন করিয়া কুলের কাছে রাখিয়া গেল। সেখান হইতে নিতান্ত ঝড়ের কাকের মতন অবস্থায় ডাঙ্গায় উঠিয়া আসিলেন। বাড়ি আসিয়া ইহার কয় কলসি পরিষ্কার জলের দরকার হইয়াছিল, তাহা জানি না। যাহা হউক, তাহাতে নাকের মুখের আর কানের বালি অনেক পরিমাণ দূর হইলেও, আর চুলের বালি খানিকট কমিলেও পেটের ভিতরে যে বালি ঢুকিয়াছিল, তাহার যে কিছুই হয় নাই, এ কথা নিশ্চয়। বিচারে যত দোষ, সব অবশ্য ঐ সমুদ্র মানেরই সাব্যস্ত হইয়াছিল! ডাঙ্গার কাছের ঘোলাজল আর বালিতে যাহারা স্নান করে, তাহাদের কতকটা এইরূপ দশা হয়। ভিতরকার জল পরিষ্কার, সেখানে স্নান করিলে এ সকল অসুবিধা ভোগ করিতে হয় না। যাহা হউক, এ কথা স্বীকার করিতে হয়, যে ধারের বালিতে লুটুপাটু হওয়ার ভিতরেও অনেককে যথেষ্ট আমোদ পাইতে দেখিয়াছি। যাহার বর্ণনা উপরে দেওয়া হইয়াছে, তিনি ঐ দুর্দশার ভিতরেও প্রাণ খুলিয়া হাসিয়াছিলেন।

 আমি বলিতেছিলাম যে সমুদ্র স্নান করিতে গেলে প্রায় সকলকেই বিশেষ লাঞ্ছনা ভোগ করিতে হয়;অথচ অনেকে সেই লাঞ্ছনার ভিতরেই ভারি একটা আমোদ অনুভব করেন। ইহা শুনিয়া অনেকের হয়তো সেই জর্মান সৈনিক পুরুষের কথা মনে পড়িবে। একজন সৈনিকের একশত বেতের হুকুম হইল। বেত খাইবার সময় কোথায় সে চ্যাচাইবে, না, তাহার হাসি আর থামেই না! সকলে জিজ্ঞাসা করিল, ‘হইয়াছে কি? এত হাসিস কেন?” সৈনিক আরো হাসিতে হাসিতে উত্তর করিল, ‘আরে আমি নয়! যে বেত খাইবে, সে অন্য লোক!’

 ইহাতে প্রমাণ হয়, যে সুখ-দুঃখ অনেকটা মেজাজের উপরে নির্ভর করে। আমি এমন বলিতেছি না, যে বেত খাইলেও আমাদিগকে হাসিতে হইবে। কিন্তু এ কথা ঠিক, যে হড়িমুখো লোকের ভাগ্যে সুখ বেশি জোটে না। যাক, এখন আবার সমুদ্রের কথা বলি। সমুদ্রের জল আর হাওয়া উভয়ই স্বাস্থ্যকর। জলে লবণ প্রভৃতি জিনিস থাকে, আর ক্রমাগত নাড়াচাড়া পাইয়া তাহার সঙ্গে বায়ু অধিক পরিমাণে মিশিতে পায়। সেখানকার বায়ুও খুব পরিষ্কার, আর তাহাতে ওজোনের (Ozone) ভাগ বেশি। অক্সিজেন ঘন হইয়া ওজোন উৎপন্ন হয়; উহা খুব স্বাস্থ্যকর। তারপর সমুদ্রের ধারে রৌদ্রের গুণও একটু বিশেষরকম দেখা যায়। তাহা খুব উজ্জ্বল কিন্তু তত গরম নয়। ইহাতেও শরীরের উপকার আছে। এ সকলের ফল পাইতে হইলে সমুদ্রের জলে স্নান করা, আর সমুদ্রের হাওয়া খাওয়ার দরকার। সমুদ্রের ধারের বাড়িতে বাস করা, দুবেলা সমুদ্রের ধারে বেড়ানো, সমুদ্রের ধারের বালিতে বসিয়া থাকা, এ সকলের দ্বারা খুব উৎকট রোগও সারিতে দেখা যায়।